মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ একথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন।
এসময় কয়েকজন সংসদ সদস্য আইনে আছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, পুলিশের আইন আছে তো, এখন পর্যন্ত ২৪০ জনকে গুলি করে মারা হয়েছে। মাদকের আসামি। পরশুদিনও একজনকে মারা হয়েছে, সেটা কোন আইনে মারা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাসে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হলো। সারাজীবন সে কাউকে মুখ দেখাতে পারবে? আদালতে যান প্রথিতযশা একজন আইনজীবী মেয়েকে নিয়ে আসবেন কাঠগড়ায়। কোনো সাক্ষী নেই। নিজের সাক্ষী নিজের দিতে হবে, কীভাবে সে ধর্ষিত হলো এবং কীভাবে কী ঘটনা ঘটেছে। এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই। সারাজীবন তাকে এ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে।
মানবাধিকারকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফিরোজ রশিদ বলেন, আজ যদি আপনার স্ত্রী, কন্যা, মা, বোন ধর্ষণের শিকার হতো! আমরা কী চাই। আমরা এই সংসদে চাই দ্রুত বিচার। তো দ্রুত বিচার কোনো আইনে হবে না। একমাসের মধ্যে কোনো বিচার করা যাবে না। এক ছাত্রীকে বগুড়া থেকে তার ভাই বাসে তুলে দিল। পাঁচজন ধর্ষণ করে ঘাড় মচকে হত্যা করে বাস থেকে ফেলে দিল। পুলিশ সবাইকে গ্রেফতার করলো। সেদিন যদি ওই পাঁচজনকে মধুপুরে নিয়ে গুলি করে মারা হতো। তাহলে পরবর্তী সময়ে টাঙ্গাইলে বাসে ধর্ষিত হতো না। একই কায়দায় একটার পর একটা ধর্ষণ হচ্ছে। ৪-৫ জন বাসে থাকে। দেখা যায় কেউ যাত্রী না, সবাই ধর্ষক।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষককে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মারা হোক। ছাত্ররা দেখুক তার লাশটা ওখানে পড়ে আছে। প্রতিমাসে ৮৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে না। এরমধ্যে প্রায় ১২ জন মারা যাচ্ছে। শিশুদের ধর্ষণ করেই মেরে ফেলে। এর চেয়ে জঘন্য অপরাধ হতে পারে না। আমরা এখান থেকে এই মেসেজটা দিতে চাই, আমরা এমনভাবে বলতে চাই যে কোনো ধর্ষক যেন পার না পায়। ১৬ বছর কেউ মনে রাখে না। আমরা এক, দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে বিচার করতে পারি। বিচার কী! এনকাউন্টারে মৃত্যু।
কাজী ফিরোজ রশিদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর এই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
ফিরোজ রশিদ বলেন, সম্প্রতি শিশু, নারী শ্রমিক, প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। কেউই এদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ অনেক ধর্ষককে তারা অ্যারেস্ট করতে পারছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় কোনো ক্লু ছিল না। তারপরও আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনী ধর্ষককে গ্রেফতার করতে পেরেছেন।
‘সাজনীন হত্যার বিচার হতে ১৬ বছর লেগেছে। তার বাবা এই দেশের একজন স্বনামধন্য শিল্পপতি। এই বিচার সম্পন্ন করতে ১৬ বছরে কয়েক কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। আমাদের বলতে খুব খারাপ লাগে। সবার ঘরেই মা-বোন আছে, আমরা লজ্জিত। ধামরাইয়ের একটি বাসে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হলো। চালককে গ্রেফতার করা হলো। পুলিশের কাছে যাবে। ১৬৪ ধারা করবে। যখন মামলায় যাবে, তখন এটার কোনো সাক্ষী থাকবে না।
‘তাহলে আমাদের কী করতে হবে। আমাদের পার্লামেন্ট স্বাধীন, সার্বভৌম। বলতে বাধা নেই এখানে কিছু লোক আছে, মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলে এখানে গণতন্ত্রে আইনের শাসন। এই ধর্ষকের আপনারা কী আইনটা করবেন। তার কেনো ফাঁসি হবে না, জেলও হবে না এক সময়। এক বছর পর বেরিয়ে যাবে কেউ খবরও রাখবে না।
**ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি সংসদে
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
এসই/এএ