বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষা সৈনিক শামছুল হুদা।
তিনি আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন।
শামসুল হুদা বলেন, দেশে মুক্তিযোদ্ধদের মূল্যায়ন করা হলেও ভাষা আন্দোলনকারীরা যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি। রাষ্ট্র যেন ভাষা সৈনিকদের জীবিতকালে না হলেও মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানটুকু দেয়।
এ সময় তিনি বর্তমান সরকারের কাছে আহবান জানিয়ে বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় যেন একটি করে হলেও শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চা কেন্দ্র করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাগুলো রক্ষা করার জন্যও সরকারের সুনির্দষ্ট প্রদক্ষেপ চান এ ভাষা সৈনিক।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে শামছুল হুদা বলেন, আজো সেই বীভৎস চিত্র ভেসে ওঠে চোখের পাতায়, যখন পাকিস্তানিদের গুলিতে ভাষা সৈনিক রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল- রক্ত ঝরতে ঝরতে নিথর দেহটি নিস্তেজ হয়ে প্রাণহীন হয়েছিল মুহূর্তেই, কিন্তু থেমে থাকিনি। তবুও দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে গেছি সামনে- লড়াই করছি মায়ের ভাষার জন্য।
তিনি বলেন, সেদিন একটি স্বপ্নের দেশের জন্য আমরা লড়েছিলাম। যে দেশের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। সর্বস্তরে প্রয়োগ হবে এ ভাষার। শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাকে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি।
তিনি বলেন, কিন্তু দুঃখ লাগে-যখন দেখি ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ করতে পারিনি। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্মারক, আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক শহীদ মিনার আজ চরমভাবে অবহেলার শিকার। একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই এর কদর বেড়ে যায়। তাছাড়া অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকে এ স্মৃতির মিনার।
শামছুল হুদা শুধু ভাষা সৈনিক ছিলেন না- তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধেরও অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমির ব্যাপারে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনই মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও সূচনার কেন্দ্র।
স্বাধীন বাংলায় অর্জন নিয়ে তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক খাত, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি খাতে উন্নতি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন একটা উল্লেখযোগ্য দিক। শিক্ষা ক্ষেত্রেও স্বাধীন বাংলাদেশ অনেক অগ্রসরমান। কিন্তু নৈতিক শিক্ষার উন্নতি হয়নি এ দেশের মানুষের তেমন একটা। দেশ এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে প্রবীণ এ ভাষা সৈনিক বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি নাম, একটি ইতিহাস।
তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন ১৯৪৮ সালে ৪ জানুয়ারি।
শামছুল হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু যেভাবে ভাবতেন, সেভাবে আর কেউ ভাবতে পারেননি।
তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, দেশের উন্নতির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের সামাজিক দায় বোধ, নৈতিকতা বোধ থাকতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে, দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে যুবকদেরকেই। তবেই একুশের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে।
ভাষা সৈনিক শামছুল হুদা:
মহান ভাষাসৈনিক শামসুল হুদা ১৯৩২ সালের ০১ ডিসেম্বর ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম মো. ইদ্রিস মিয়া, মার নাম মরহুমা রহিমা খাতুন। শিক্ষাজীবনে শামসুল হুদা ১৯৪৭ সালে তখনকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নোয়াখালী জেলা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি, পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনির্ভাসিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে এমএস ডিগ্রি লাভ করেন। ভাষা-আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে তখনকার পাকিস্তান সরকার সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসে (সিএসপি) চাকরি দেয়নি।
শামসুল হুদা অসংখ্য সম্মাননা পদক ও পুরস্কার লাভ করেছেন। তার মধ্যে একুশে পদক পদক-২০১৪, স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তিতে বিজয় দিবস সম্মাননা পদক, বিশ্ব বাঙালি সম্মেলনের সৌজন্যে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
এসএইচডি/এজে