রেলস্টেশনের কাউন্টার ও মোবাইল অ্যাপস- এই দুই স্থানে সমান বণ্টনে দৈনিক আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটগুলো ভাগ করে দিয়েছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। ফলে প্রযুক্তিনির্ভর যাত্রীরা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট দ্রুত কেটে নিচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গল-ঢাকাগামী চারটি এবং শ্রীমঙ্গল-চট্টগ্রামগামী দু’টিসহ মোট ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন যাতাযাত করে। সেগুলো হলো- ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস এবং উপবন এক্সপ্রেস। এছাড়াও চট্টগ্রামগামী দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন হলো পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেস (ট্রেন নম্বর- ৭৭৪) শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা ২৩ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ান হয়। এ ট্রেনে শ্রীমঙ্গলের আসন সংখ্যা মাত্র ২৬টি। শোভন ১০টি, শোভন চেয়ার ১০টি এবং প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৬টি।
প্রতিদিন দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (ট্রেন নম্বর- ৭১৮)। শ্রীমঙ্গলের জন্য এর আসন সংখ্যা মাত্র ৩৭টি। এর মধ্যে শোভন ১০টি, শোভন চেয়ার ১৩টি, প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৫টি এবং কেবিনে রয়েছে ৯টি আসন।
ঢাকার উদ্দেশে প্রতিদিন শেষ বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটে শ্রীমঙ্গল ছেড়ে যায় আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস (ট্রেন নম্বর- ৭১০)। অন্য সবগুলো আন্তঃনগর থেকে শ্রীমঙ্গলে এর আসন অপেক্ষাকৃত একটু বেশি, মোট ৫৩টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৩০টি, এসি চেয়ার ১৫টি এবং কেবিনে রয়েছে ৮টি আসন।
প্রতিদিন মধ্যরাত অর্থাৎ, ২টা ১৫ মিনিটে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর উপবন (ট্রেন নম্বর- ৭৪০)। শ্রীমঙ্গলের জন্য বরাদ্দ এর আসন সংখ্যা মাত্র ৩৬টি। এর মধ্যে শোভন ১৫টি, শোভন চেয়ার ১০টি, প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৫টি এবং বাথ কেবিনে আসন রয়েছে ৬টি।
চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা (ট্রেন নম্বর- ৭২০) প্রতিদিন শ্রীমঙ্গল ছেড়ে যায় দুপুর ১২টা ৩২ মিনিটে। এ ট্রেনে শ্রীমঙ্গলের জন্য বরাদ্দ মোট আসন মাত্র ২৭টি। এগুলো হলো- শোভন চেয়ার ২০টি, এসি চেয়ার ৪টি এবং এসি কেবিন ৩টি।
সবচেয়ে করুণ অবস্থা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন (ট্রেন নম্বর- ৭২৪) এক্সপ্রেস ট্রেনের। প্রতিদিন রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে শ্রীমঙ্গল ছেড়ে যায়। এখানে শ্রীমঙ্গলের জন্য বরাদ্দ আসন মাত্র ১৫টি। সবগুলোই শোভন চেয়ার।
কালনী শুক্রবার, জয়ন্তিকা বৃহস্পতিবার, পারাবত মঙ্গলবার, পাহাড়িকা শনিবার এবং উদয়ন রোববার এ আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক বন্ধ রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এবং উদয়ন লাকসাম, কসবা ও লাঙ্গলকোট স্টেশনের জন্য শ্রীমঙ্গল থেকে কোনো টিকিট বরাদ্দ নেই। অথচ এ রুটে প্রতিদিন অনেক যাত্রী চলাচল করেন। এছাড়াও ঢাকাগামী কালনীতে শায়েস্তাগঞ্জ, আজমপুর, ভৈরব এবং নরসিংদী স্টেশনের কোনো টিকিট নেই।
পর্যটক শেখ শাদী বাংলানিউজকে বলেন, আমিই শুধু না, আমার মতো অনেক ট্রেনযাত্রী শ্রীমঙ্গল স্টেশনে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পান না। সরকার যেহেতু শ্রীমঙ্গলকে পর্যটননগরী ঘোষণা করেছে, তাই এখানে দৈনিক পর্যাপ্ত টিকিটের ব্যবস্থা রাখা দরকার। সব জার্নি থেকে মানুষ ট্রেনজার্নি এজন্য পছন্দ করে যে, ট্রেন তার সুনির্দিষ্ট সীমানা দিয়ে যাতাযাত করে এবং অনেক নিরাপদ ও আরামদায়ক।
এ পর্যটক আরও বলেন, চিকিৎসাজনিত প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি- যে দেশ রেলযোগাযোগে ভালো সেই দেশ তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. আফসার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শ্রীমঙ্গল-ঢাকা এবং শ্রীমঙ্গল-চট্টগ্রাম মোট ৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের আমাদের কাউন্টারে বরাদ্দ টিকেটের ১৯৪টি। শ্রীমঙ্গল পর্যটননগরী হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক ট্রেনের টিকেটের জন্য ভিড় করেন। আমরা চাহিদামতো টিকিট তাদের দিতে পারছি না। কালনী, পারাবত এবং উদয়ন ট্রেনে যাত্রীদের দৈনিক চাপ বেশি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মপ্রধান (পরিকল্পনা) আ ন ম আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, রেলসেবার মান বাড়ানোর জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ এলাকার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। টিকিট সংকট বিষয়টিও আমলে নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
বিবিবি/এএ