দীর্ঘ তদন্তের পর সংস্থাটি বলছে, পারিবারিক কলহ ও মানসিক যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান শাহ।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সালমান শাহ রহস্যজনক মৃত্যুর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমরা সালমানের তখনকার স্ত্রী সামিরা, তার স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, সহশিল্পীসহ সবার বক্তব্য নিয়েছি।
‘সবমিরিয়ে আমাদের কাছে এটি-ই প্রতীয়মান হয়েছে যে, পারিবারিক কলহ ও মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরেই আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ। ’
সালমান শাহের আত্মহত্যার কারণ প্রসঙ্গে ডিআইজি বনজ কুমার বলেন, আত্মহত্যার কারণগুলোর মধ্যে আমরা তদন্তে পেয়েছি- সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা, স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, মাত্রাধিক আবেগপ্রবণতার কারণে একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার বা আত্মহত্যার চেষ্টা, মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা, জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেওয়া এবং সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।
পড়ুন>> পাঁচ কারণে আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ
‘পিবিআইয়ের তদন্তকালে ঘটনার সময় উপস্থিত, ঘটনা সংশ্লিষ্ট ৪৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে। ’
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
এরপর ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ এনে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। ওই সময় অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) নির্দেশ দেন আদালত।
তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়।
কিন্তু সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ফলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছরে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
পরে ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। কিন্তু র্যাবের তদন্ত চলাকালে বেশ কয়েকবার শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা বিব্রত বোধ করে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলার নথি পাঠিয়ে দেন।
এ আদালতের বিচারক মো. ইমরুল কায়েস ওই বছরেরই ২১ আগস্ট র্যাবের মাধ্যমে পুনঃতদন্তের (অধিকতর) আদেশ আইনসম্মত হয়নি উল্লেখ করে বিষয়টি আবারও শুনানি নেওয়ার জন্য সিএমএম আদালতকে দায়িত্ব দেন।
এর ধারাবাহিকতায় ওই আদালতের বিচারক লস্কর সোহেল রানা নারাজি আবেদনের ওপর আবারও শুনানি করেন। পরে ৭ ডিসেম্বর শুনানির পর সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা— তা তদন্ত করতে পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর সবশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন প্রতিবেদন দাখিল না করে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ৩০ মার্চ তারিখে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০/আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা
এমএমআই/এমএ