ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পিবিআইয়ের সচিত্র প্রতিবেদনে সালমান শাহ মৃত্যুর ঘটনাপ্রবাহ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
পিবিআইয়ের সচিত্র প্রতিবেদনে সালমান শাহ মৃত্যুর ঘটনাপ্রবাহ

ঢাকা: দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহকে হত্যা করা হয়নি। নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তার সম্পর্কের জের ধরে পারিবারিক কলহের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

দীর্ঘ তদন্তের পর সংস্থাটি সালমান শাহের আত্মহত্যার পেছনে ৫টি কারণ উল্লেখ করেছে। কারণগুলো হলো-১. চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তার অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা।

২. স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ ৩. বেশি আবেগপ্রবণ হওয়ার কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা। ৪. মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা, যা জটিল সম্পর্কের বেড়াজাল তৈরি করে অভিমানে রূপ নেয় এবং ৫. সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এ বিষয়ে প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তুলে ধরেন।  

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সালমান শাহ মৃত্যুর ঘটনাপ্রবাহ আঁকা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরে পিবিআই। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য পিবিআইয়ের সেই সচিত্র প্রতিবেদনের লিখিত অংশ তুলে ধরা হলো।

এতে দেখানো হয়, ঘটনার শুরুতে ডাবিং থিয়েটারে সালমান ও শাবনূরকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে রাগ করে বেরিয়ে যান স্ত্রী সামিরা। ঘটনার আগের রাত সাড়ে ১১টায় সালমানের সেলফোনে চিত্রনায়িকা শাবনূরের কাছ থেকে ফোন আসে। এ সময় সালমান শাহ কথা বলতে বলতে বাথরুমে ঢুকে যায়। বাথরুমে গিয়ে সালমান শাহ চিৎকার করে বলছিলেন যে, তাকে যেনো আর ফোন না দেওয়া হয়। এরপর রাত ১২টার দিকে তার মোবাইলে আবারও কল দেন শাবনূর। এ সময় সামিরা রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার উদ্দেশে নিচতলার লবিতে চলে যান। লবিতে সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেন খান বাসায় ফিরিয়ে আনার জন্য সামিরাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। সামিরা বাসায় ফিরে কান্নাকাটি করতে থাকেন। রাত অনুমান সোয়া ১২টার দিকে শাবনূরের মোবাইল থেকে আবারও কল আসে। শাবনূরের কল এসেছে দেখতে পেয়ে সালমান শাহ রাগে সিটিসেল মোবাইলটি মেঝেতে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন। এছাড়া শাবনূরের উপহার দেওয়া ফোনটিও ভেঙে ফেলেন। পর দিন সালমান শাহ বাসার কাজের সাহায্যকারী মনোয়ারা ভাঙা মোবাইলটি ময়লার ঝুড়িতে রেখে দেয়। এরপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বাসায় আসেন। এ সময় সামিরা তার শ্বশুরকে চা-নাস্তা খেতে দেন।

ঘটনার দিন সকালে সালমান শাহ ঘুম থেকে উঠে কিচেন রুমে কাজে সাহায্যকারী মনোয়ারার কাছে পানি চান। মনোয়ারা এক মগ পানি দেন। সালমান শাহ পানি পান করে আরও এক মগ পানি চেয়ে পান করেন। পরে মালি জাকির কলিংবেল বাজায়। সালমান নিজেই দরজা খুলে দেন। এসময় জাকির সালমান শাহের কাছে তিন মাসের বকেয়া বেতন চান। কিন্তু কোনো কথা না বলে ভেতরে চলে যান। পরে সালমান শাহ দারোয়ান দেলোয়ারকে ইন্টারকমে ফোন করে বলেন, তার বাসায় যেনো কাউকে আসতে দেওয়া না হয়। এরপর বেডরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে স্ত্রী সামিরার দিকে একদৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে ছিলেন। সামিরা তখন বিছানায় শোয়া অবস্থান টিভি দেখছিলেন। সামিরা তখন সালমানকে জিজ্ঞাসা করে, কী দেখছো? সালমান শাহ কোনো কিছু না বলে বাথরুমে চলে যান। সেখান থেকে বের হয়ে তিনি ড্রেসিং রুমে চলে যান এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় কাজের সাহায্যকারী ডলি তার ছেলে ওমরকে বাথরুম থেকে গোসল করিয়ে বের হয়। ওমরের কাপড়-চোপর ড্রেসিং রুমের ভেতরে থাকায় ওমর ও তার মা ডলি দরজা নক করেন। দরজা না খোলায় ওমর বাইর থেকে বার বার ডাকতে থাকে। ওমর ও ডলি ডাকার পরেও দরজা না খোলায় বিষয়টি সামিরাকে জানালে সামিরা ড্রেসিং রুমের চাবি এনে দরজা খোলে। তখন ওমর, ডলি, মনোয়ারা ও আবুল দরজার সামনে উপস্থিত ছিলো।

ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে সালমান শাহকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় সামিরা চিৎকার দিয়ে সালমান শাহকে নিচ থেকে উঁচু করে ধরে। তাকে আবুল ও মনোয়ারা সহায়তা করে। ডলি রান্না ঘর থেকে বটি এনে অ্যালুমিনিয়ামের মই বেয়ে ওপরে উঠে ফাঁসের রশি কেটে দেয়। বেলা অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে সালমান শাহকে ধরাধরি করে পাশের বেডরুমে শোয়ানো হয়। সামিরা মাথায় পানি দেয়, ডলি ও মনোয়ারা তেল গরম করে সালমানের বুকে, হাতে ও পায়ে মালিশ করে। খবর পেয়ে দারোয়ান দেলোয়ার সালমান শাহ ফ্ল্যাটে ছুটে আসে। এরপর সালমানের বাবা, মা ও ভাইসহ অন্যান্য স্বজনরা ছুটে আসেন। তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেওয়া হয়। হলি ফ্যামিলি থেকে সালমান শাহকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চলচ্চিত্র নায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

এরপর ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ এনে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। ওই সময় অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে থানা পুলিশের পরিবর্তে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

এরই মধ্যে তার মৃত্যুর ২৩ বছর পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময়েও চিত্রনায়কের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। এর মাঝে কয়েক দফা তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তবে তা বরাবরই নাকচ করেছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী।  

এ অবস্থায় ২০১৬ সালের শেষ দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নতুন করে এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। এর সূত্র ধরেই সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই।

** শাবনূরের কারণে আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান শাহ: পিবিআই
** আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটটি লিখেছিলেন সালমান শাহ: পিবিআই
** পাঁচ কারণে আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
ওএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।