বাংলানিউজ: প্রথমেই আপনাকে বিশ্ব নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
আনোয়ারা সৈয়দ হক: তোমাকেও শুভেচ্ছা।
বাংলানিউজ: প্রথমেই আপনার কাছে জানতে চাই, সাহিত্যে নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: দেখো, আমাদের সাহিত্যে সব সময়ই নারী গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী অবস্থানে ছিলো। পুরুষ সাহিত্যিকরা নারীদের জন্য লিখেছেন। সেখানে তারা নারীকে মা, জায়া, কন্যা, প্রেয়সী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তবে সেখানে নারী চরিত্রগুলো সেভাবে শক্তিশালী নয়। বরং পুরুষের সহযাত্রী হিসেবে তারা নারীকে উপস্থাপন করেছেন।
বাংলানিউজ: নারী সাহিত্যিকরা কীভাবে তাহলে উপস্থাপন করেছেন?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: নারী সাহিত্যিকরাও প্রথম দিকে পুরুষ সাহিত্যিকদের মতো লিখেছেন। তবে এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
বাংলানিউজ: এর কারণ কী?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: নারীকে পুরুষের সমকক্ষ দেখানোর প্রথম একটা সমস্যা যেটা হয়, সেটা হলো নারীর একটা সেক্সুয়াল অর্গান মিসিং আছে। সেজন্য পুরুষ মনে করে তার আধিপত্য সব সময় বজায় থাকবে। ‘মেয়ে তো মেয়েই’- এটা নানাভাবে তারা উল্লেখ করে। মেয়েরা কী করবে, ও মেয়ে মানুষ কী বলবে- এ ধরণের কথা শুনতে শুনতে যুগের পর যুগ মেয়েদের মধ্যেও একটা কালিমা জমেছে। নিজেদের প্রতি অবিশ্বাসও জমেছে। তারা যে পুরুষের জন্য একটু নীচে, ছোট; সেই আত্মবিশ্বাসহীনতা রয়েছে। এটা যুগের পর যুগ হয়ে আসছে।
বাংলানিউজ: বর্তমান পরিস্থিতি কী?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: এখন মেয়েরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সাহিত্যে তো বটেই, সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের চরিত্র হিসেবে, ব্যক্তিত্ব হিসেবে, ক্ষমতা হিসেবে দাঁড় করাতে পারছে। এগুলো উপন্যাস-গল্পেও চলে আসছে। তবে মেয়েরা এখনও মানসিকভাবে পুরুষের ওপর নির্ভরশীল।
বাংলানিউজ: এখন সাহিত্যে নারীর অবস্থান কেমন?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: সাহিত্যে নারীকে যেভাবে আগে দেখা হতো, সে চরিত্র অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাদের আচার-আচরণ বদলে গেছে, সমবয়সী পুরষের সঙ্গে প্রেম করে। প্রেমিককে তুই-তোকারি করে। এগুলো আগে আসেনি। আমাদের সাহিত্যে সব সময় পুরুষকে ওপরে এবং নারীকে নিচে রাখা হতো। সেগুলো পুরুষের প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও কথাবার্তায় উঠে আসতো।
বাংলানিউজ: আপনি সাহিত্যে নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করেন?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: এটা আসলে চরিত্রের ওপর নির্ভর করে। তবে আমি সব সময়ই আমার গল্পে, উপন্যাসে নারীকে আত্মমর্যাদাশীল অবস্থানে রাখার চেষ্টা করেছি। যাতে আমার নারী চরিত্রটি নিজের আলাদা সত্ত্বাকে সনাক্ত করতে পারে।
বাংলানিউজ: আপনি সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী। তার মতো এত বড় মাপের লেখকের স্ত্রী হওয়ায় আপনার লেখক হয়ে উঠায় কোনো সমস্যা হয়নি?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: কোনো সমস্যায় হয়নি। সৈয়দ হক আমার বন্ধু ছিলেন। তিনি সব সময়ই আমাকে আমার কাজের স্বাধীনতা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমার লেখালেখি তুমি চালিয়ে যাও। তবে তিনি কোনো সাহিত্য সভায় আমাকে নিয়ে যেতেন না।
বাংলানিউজ: কেন? এর কারণ কী?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: তিনি বলতেন, আমি লেখক, তুমিও লেখক। দুইজন ভিন্ন ভিন্ন লেখক সত্ত্বা নিয়ে পথ চলছি। আমি চাই না, কেউ তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে বেশি প্রাধান্য দিক। এ কারণে কেউ যদি আমাকে ভাবী ডাকতো, তিনি প্রতিবাদ করতেন। বলতেন, ওকে ভাবী না আপা ডাকবে। তিনি আসলে আমাকে সাহিত্যচর্চার জন্য সব সময়ই উৎসাহ দিয়েছেন।
বাংলানিউজ: মৌলবাদীরা তো সব সময়ই নারীদের বিরুদ্ধে...
আনোয়ারা সৈয়দ হক: আমি তোমার প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছি। দেখো, একটি পক্ষ সব সময়ই নারীকে অবদমন করতে চায়। সেটা তো মৌলবাদী শক্তিই। এটা সব সমাজে, সব সভ্যতায় আছে। কিন্তু একজন সচেতন নারী, প্রগতিশীল নারী এসব বাধা পেরিয়েই এগিয়ে যাবে।
বাংলানিউজ: নারী সাহিত্যিকদের ওপরেও তো মৌলবাদীদের আঘাত রয়েছে।
আনোয়ারা সৈয়দ হক: তা তো থাকবেই। ওই যে বললাম, একটি পক্ষ কখনই নারীকে এগিয়ে যেতে দিতে চায় না।
বাংলানিউজ: সব মিলিয়ে বর্তমান সমাজে নারীর অবস্থান সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: আগের তুলনায় অনেক ভালো। তবে নারীকে আত্মমর্যাদাশীল অবস্থানে যেতে হবে। এজন্য নারীকে আগে ব্যক্তিজীবনে সাবলম্বী হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
ডিএন/এজে