ঢাকা, রবিবার, ২১ পৌষ ১৪৩১, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

করোনা

ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে, দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২০
ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে, দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের  

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) । এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সরকার। 

এছাড়া মোট ২৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে।

আমরা সার্বিকভাবে এ বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।  

এছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।  

এদিকে করোনা আতঙ্কে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। অনেকেই মেতে ওঠেছেন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কেনাকাটা। আর এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক অফিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাসা থেকে অফিস করার নির্দেশনা দিয়েছে।  

এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আর করোনা আতঙ্ক নিয়ে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। রেলস্টেশনে বিভিন্ন সময় ভিড় দেখা গেলেও রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনে তেমন যাত্রী নেই, সিটিং সার্ভিসও ভুগছে যাত্রীশূন্যতায়। ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা কমেছে মার্কেট ও শপিংমলে।

নতুন করে ঢাকায় আসা মানুষের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে ঢাকা ত্যাগের সংখ্যা। ঢাকার পরিস্থিতি এখন প্রায় ঈদের মতো। গত দুই-তিনদিন ধরেই দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল কিংবা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গ্রামমুখী মানুষকে টিকিট কিনতে দেখা যায়।

বরিশালের উজিরপুরের বাসিন্দা সোলায়মান ঢাকার বংশাংলের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে থাকেন একই এলাকায়। তার একমাত্র ছেলের স্কুল বন্ধ। অফিসও ৩১ মার্চ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।  

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে লঞ্চের টিকিট কেনার সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, অফিস বন্ধু। জিনিসপত্রের দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এ অবস্থায় বাড়ি চলে যাচ্ছি। যাতে শুধু বাড়ির মধ্যেই থাকা যায়। এ অবস্থায় ক’দিন বাড়িতে থেকে আসি।  

এদিকে আতঙ্ক কাজ করলেও সচেতনতা বেড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। রাজধানীর রাস্তায় যারা বের হচ্ছেন তাদের অধিকাংশকেই মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়। অনেকেই ব্যবহার করছেন হ্যান্ড গ্ল্যাভস, সঙ্গে রাখছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

খুলনার আরিফ হোসেন, রোববার ভোর ৬টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন গ্রামের বাড়ি যাবেন বলে। পেশায় কসমেটিকস ব্যবসায়ী। ঢাকার গুলিস্তানে তার দোকান রয়েছে।  

বাংলানিউজকে আরিফ বলেন, প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা কেউ-ই নিরাপদ নই। বেঁচে থাকলে টাকা আসবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আর ঢাকা আসার ইচ্ছে নেই।

নিজের সুরক্ষা হিসেবে মাস্ক, হেক্সিসল এবং হ্যান্ড গ্ল্যাভস পরতে দেখা যায় আরিফকে। বললেন, বাড়ি যাচ্ছি। ট্রেন-বাসসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে দেখা হবে। তাই নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষা হিসেবে এগুলো নিয়েছি। সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তা আমাদের রক্ষা করুন।  

প্রায় একই কথা জানালেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ছাত্র ইয়ারুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে টিউশনি করেন তিনি। এ আয় দিয়ে নিজে চলে কিছু জমাতেও পারেন তিনি।  

কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, টিউশনিতেও যাচ্ছেন না। তাই এখন চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী; করোনা প্রতিরোধে গ্রামের মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি এ সময়টায় বাড়িতেই থাকতেন তিনি।  

জানতে চাইলে বাংলানিউজকে ইয়ারুল বলেন, ভার্সিটি বন্ধ। টিউশনিতেও যাচ্ছি না। তবে সব ভেবে নিজেকে আগে নিরাপদে রাখা ভালো।  

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকায় আসা যাত্রী কমেছে কিন্তু ঢাকা ছাড়ার যাত্রী বেড়েছে কয়েকগুণ। হয়তো করোনা আতঙ্ক কাজ করছে বলেই ঢাকা ছাড়ছেন তারা। তাদের ধারণা ঢাকায় যেহেতু বেশি জনসমাগম তাই গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।  

গণপরিবহনে কমেছে যাত্রী
যাত্রীর অভাবে গণপরিবহনের সংখ্যা কমেছে রাজধানীতে। গাড়ি কিছুটা চললেও যাত্রী নেই আগের মতো। লোকাল বাসগুলোগে যাত্রী সিটিং হলেও সিটিং সার্ভিসগুলোতে ফাঁকা রেখেই গাড়ি চলতে দেখা গেছে।  

বলাকা বাসের চালক হারুন বলেন, করোনা আতঙ্ক কাজ করছে যাত্রীর মাঝে। এজন্য তাদের সংখ্যা কমেছে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছেন অনেকে।

সচেতনতা বেড়েছে
সাধারণ মানুষের মাঝে এখন সচেতনতা বেড়েছে। এখন মাস্ক ব্যবহার করছেন অধিকাংশ। প্রথম দিকে মাস্কের দাম বাড়লেও এখন কিছুটা নাগালের মধ্যে। অনেককে সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতেও দেখা গেছে। ফুটপাতে চা পান কিংবা সিগারেট পান কমিয়েছেন অনেকেই। হোটেলে খাবার গ্রহণের আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে দেখা গেছে অনেককে।

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, রয়েছে মনিটরিং
করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পেঁয়াজের দাম এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় দুই গুণ। অস্থিরতা তৈরি হয়েছে চালের বাজারে। দাম বেশি রাখা হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যেও।

তবে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরও থেমে নেই ব্যবসায়ী ও দোকানির এহেন কর্মকাণ্ড! 

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২০ 
ইএআর/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।