প্রাণঘাতী এই ভাইরাস নিয়ে চাপা আতঙ্কের কারণে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে ক্রমেই যাত্রী সংখ্যা কমেছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া এখন কেউ আর ট্রেনেও চলাচল করতে চাচ্ছেন না।
পাঁচদিন হলো রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ। কিন্তু তার পরও এর প্রভাব পড়েনি ট্রেনে। পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ট্রেনগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। রেলস্টেশনে যাত্রীদের আসা-যাওয়াও সীমিত হয়ে গেছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশজুড়ে ক্রমেই আতঙ্ক বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আর তাই এই সংক্রমণ রুখতে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভ্রমণের ক্ষেত্রে নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এজন্য কেউই এখন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাইছেন না। ফলে নিরাপদ বাহন হিসেবে খ্যাত ট্রেনে ক্রমেই কমছে যাত্রী সংখ্যা। তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার (২৩ মার্চ) বিকেল ৪টায় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনের অধিকাংশ বগির প্রায় অর্ধেক সিট ফাঁকা। যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে করোনা আতঙ্ক। এছাড়া রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারেও নেই যাত্রীদের চিরচেনা দীর্ঘ লাইন।
সরেজমিনে রাজশাহী রেলস্টেশনে দেখা গেছে, করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চলছে। যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে প্লাটফর্মের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার আগে ট্রেনের বগি পরিষ্কার করতে জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। টিকিট কাউন্টারেও দেওয়া হচ্ছে জীবানুনাশক স্প্রে। এছাড়া বগির টয়লেটে হাত পরিষ্কার করার বিভিন্ন উপকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে এখন ট্রেন ভ্রমণ এড়িয়ে চলছেন।
দেখা যায়, করোনার জেরে টান পড়েছে ট্রেনের হকারদের বেচাকেনাতেও। আন্তঃনগর ট্রেনে ছোলা-বাদাম বিক্রি করেন মেসবাহ উদ্দীন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিক্রি অর্ধেক হয়ে গেছে। সপ্তাহখানেক আগেও দিনে আট-দশ কেজি করে ছোলাসেদ্ধ বিক্রি করেছি। এখন খোলা খাবার কেউ কিনতে চাইছে না।
স্টেশনের ভেতরের মুদি দোকানী আব্দুস সালাম বলেন, ট্রেনে যাত্রী কমে যাওয়ায় আমাদের বিক্রিও কমেছে। এমন চললে সপ্তাহখানেক পর পরিস্থিতি কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়েই ভাবছি।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ট্রেনে যাত্রী কমতে শুরু করেছে। যত দিন যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীর সংখ্যা ততই কমে যাচ্ছে। রাজশাহী-ঢাকাগামী ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। তবে রাজধানী ঢাকা থেকে রাজশাহীতে আসা ট্রেনগুলোতে যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিক রয়েছে।
জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) ফুয়াদ হোসেন আনন্দ বাংলানিউজকে বলেন, মূলত করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে ট্রেনে যাত্রী কমছে। তবে এখন যারা ভ্রমণ করছেন তাদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। যাত্রীদের প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা মেপে রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন দায়িত্বরত কর্মচারীরা।
এছাড়া প্রতিটি বগি ও টিকেট কাউন্টার পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি, ওয়াশরুমে হাত পরিষ্কার করার জন্য সাবানসহ বিভিন্ন উপকরণ রাখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২০
এসএস/