ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে ৬টি কোর্স ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২০
বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে ৬টি কোর্স ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে

ভারতের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে অন্তর্ভূক্ত হলো বাংলাদেশের সাহিত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এ বিষয়ে মোট ছয়টি পূর্ণাঙ্গ কোর্স চালু করা হয়েছে, সূচিতে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিকদের বই।

এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সাহিত্য চর্চা, শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পক্ষপাত আর বৈষম্য মুছে ফেলার দুয়ার খুলে গেল বলে মনে করছেন দুই বাংলার সাহিত্যকরা।

কারণ এর আগে এত উদার হয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে ভাবেনি ভারতের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।

কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের লেখা অন্তর্ভূক্ত থাকলেও এবারই প্রথম এভাবে পূর্ণাঙ্গ কোর্স চালু করা হলো।  

জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও সেলিনা হোসেনের বিচ্ছিন্ন কিছু লেখা অন্তর্ভুক্ত আছে।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হওয়া কোর্সগুলো হলো- বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, গল্প এবং স্মৃতিকথা, মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মজীবনী।

কোর্সের সূচিতে কবিতার বই নির্বচিত করা হয়েছে তিনটি। এগুলো হলো- শামসুর রাহমানের ‘বন্দী শিবির থেকে’, নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’ এবং শামীম রেজার ‘যখন রাত্রির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে’।  

পাঠ্যসূচিতে নির্বাচিত উপন্যাসও তিনটি। এগুলো হলো- আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’, সেলিনা হোসেনের ‘যুদ্ধ’ এবং শহীদুল জহিরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’।  

নাটকের কোর্সেও রাখা হয়েছে তিন আলোচিতজনের তিনটি বহুল আলোচিত নাটক। এগুলো হলো- সৈয়দ শামসুল হকের ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’, সেলিম আল দীনের ‘নিমজ্জন’ এবং সাঈদ আহমেদের ‘কালবেলা’।  

গল্পের কোর্সে নেওয়া হয়েছে শওকত আলীর গল্প ‘উম্মুল বাসনা’, হাসান আজিজুল হকের ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ এবং প্রশান্ত মৃধার ‘যুধিষ্ঠিরের সঙ্গী’।

এছাড়া স্মৃতিকথা, মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মজীবনী কোর্সে নেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ এবং মইদুল হাসানের ‘মূলধারা ’৭১’।  

...ভারতের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে নিজের কবিতার বই নির্বাচিত হওয়ায় আনন্দিত  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কবি শামীম রেজা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের সর্বমোট ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই প্রথম বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ছয়টি কোর্স উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সংযোজিত হলো। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় পথিকৃতের কাজটি করলো। আশা করি পশ্চিমবঙ্গের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বাংলাদেশের সাহিত্য সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করবে। ’

তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রণেতারা দুই বাংলার সাহিত্য নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছেন। কেউ বাংলা হিন্দু সাহিত্যের ইতিহাস, কেউ বাংলা মুসলিম সাহিত্যের ইতিহাস লিখেছেন! প্রকৃত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আজ পর্যন্ত লেখা হয়নি। আমরা আশাবাদী, প্রকৃত বাংলা সাহিত্য চর্চা হলে সেখানে ইতিহাস ঠিকঠাক মতো লেখা হবে। ’

নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ভীষণভাবে আনন্দিত যে বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা লেখকদের সঙ্গে আমার কাব্যগ্রন্থটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানানোর সাথে সাথে কবি অধ্যাপক ডক্টর নিখিলেশ রায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিনয়ের সঙ্গে। ’

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাংশে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি শহরের নিকটবর্তী রাজা রামমোহনপুরে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক ও কারিগরি মানবসম্পদ বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবছর ৩৬ হাজারের বেশি স্নাতক ও দেড় হাজারের বেশি স্নাতকোত্তর ও গবেষক ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকেও শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়তে যান। তাই বর্তমানে এটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২০
এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।