ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মুসাপুত্র হাজ্জাজের ভারতবিরোধী পাঁয়তারা কার মদদে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
মুসাপুত্র হাজ্জাজের ভারতবিরোধী পাঁয়তারা কার মদদে

ঢাকা: ক্ষমতাসীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশের ভেতরে নানা ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও অপতৎপরতা চালাচ্ছেন মুসা বিন শমসেরের পুত্র ববি হাজ্জাজ। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে ভারত-বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভাঙার ‘এজেন্ডা’ নিয়ে অপচেষ্টায় মেতেছেন অস্তিত্ব সংকটে ভোগা এই তরুণ।

অভিযোগ আছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ববির বাবা এবং সমালোচিত-বিতর্কিত অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের মামলা চলছে।

একই সাথে যুদ্ধাপরাধের মুসার সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলমান রয়েছে। আর এসব কিছু থেকে সংশ্লিষ্টদের নজর অন্যত্র সরিয়ে নিতেই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সরকার এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন মুসা পুত্র ববি।  

আরও পড়ুন: রহস্যজনক অপতৎপরতায় মেতেছেন ববি হাজ্জাজ

এই কাজে দ্রুত সফলতা পেতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে ‘হেয়’ করার নীল নকশা এঁকেছেন ববি হাজ্জাজ। এরজন্য সহজতম ‘টার্গেট’ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে।

সম্প্রতি ভারত, ভারতীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ বেশকয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন ববি। নানান অগ্রহণযোগ্য বর্ণনায় মন্তব্য করছেন দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে নিয়েও। ব্যক্তিগতভাবে বা পারিবারিক ইতিহাসে অতীতে কখনও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও রীতিমতো রাজনৈতিক বোদ্ধা সেজে সেসব মন্তব্য করছেন ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে।

বাংলাদেশ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশের ভেতরে থেকেই ভারত ইস্যুতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন ববি হাজ্জাজ। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একটি মহলের মদদে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় এমন কর্মকাণ্ড ববির।  

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত এবং বাংলাদেশ যখন একসাথে কাজ করে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়েও ভারতকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন ‘অস্ত্র বিক্রির দালালি করে কথিত ধনী’ হওয়া মুসা পুত্র ববি। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের অসামান্য অবদান ভুলে গেলেও গেল মে মাসেই বাংলাদেশকে তৃতীয় দফায় করোনা শনাক্তকরণ কিট এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছে দেশটি। দেশটির প্রধান দুই দল বিজেপি বা কংগ্রেস; ক্ষমতায় যেই আসুক না কেন বাংলাদেশের পাশে সবসময়ই ছিল ভারত।  

আর সেই ভারতের বিরুদ্ধেই অনলাইন-অফলাইন দুই মাধ্যমেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন ববি হাজ্জাজ এবং তার বিতর্কিত রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)। ২০১৯ সালের শেষ দিকে ভারতের সমালোচনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ফাটল ধরাতে “সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা” শিরোনামের কর্মসূচি দিয়ে চেষ্টা করেছেন দেশের ও দেশের বাইরে মনোযোগ আকর্ষণের। অবশ্য দেশের ভেতরেই জনগণের সাড়া না পাওয়ায় ভেস্তে যায় সেই কর্মসূচি। নিজের অবৈধ অর্থে কেনা গুটিকয়েক অনুসারী বাদে এনডিএমের সেসব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের কোনো উপস্থিতি ছিল না।

কিছুই যখন কাজে আসছিল না তখন প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেন ববি হাজ্জাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট ইউটিউবে বিভিন্ন সময় ভারতবিদ্বেষী কনটেন্ট পোস্ট করে আসছেন তিনি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এসব কনটেন্ট শেয়ার করে দ্রুত ভাইরাল করার অপচেষ্টাও করেন তিনি। তরুণ প্রজন্মের মাঝে প্রতিবেশী বিরোধী আক্রমণাত্মক মনোভাব জাগিয়ে তুলতেও চেষ্টা রয়েছে তার। আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, বাংলায় লেখা এধরনের বেশিরভাগ পোস্টের ইংরেজি অনুবাদও যুক্ত করে দিতেন ববি। অথচ নিজের ভেরিফায়েড পেইজের অন্যান্য স্বাভাবিক পোস্টে ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন না তিনি।

গত ১ মার্চ নিজের পেইজে ‘সে নো টু মোদী’ অর্থাৎ ‘মোদীকে না বলুন’ শিরোনামে একটি পোস্ট করেন ববি হাজ্জাজ। দলের যুব নেতাদের বিক্ষোভ সমাবেশে যোগদানের আহবান জানান। অবশ্য সেখানেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে গেল বছরের ৯ নভেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে মনোযোগ আকর্ষণে ধর্মকে পুঁজি করে আরেকটি পোস্ট করেন ববি।

তবে এতকিছু করেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিনষ্ট করা যাবে না বলে দৃঢ বিশ্বাস পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের। ববির এহেন কর্মকাণ্ড নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি তার (ববি) এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না, এখনও সেগুলো দেখিনি। তবে এমন কর্মকাণ্ড যে বাংলাদেশ থেকে হচ্ছে না, তা না। অনেকেই অনেক জায়গা থেকে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা সফল হবেন না এটাও বলে দিচ্ছি। ভারত, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক বোঝাপড়ার, পারস্পরিক শ্রদ্ধার।  

ববি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, আপনি (প্রতিবেদক) তার কার্যকলাপ সম্পর্কে যেমনটা বললেন, এমনটা হচ্ছে কিছু জ্ঞানপাপীর কাজ। সমাজের একজন পরিচিত মুখ যখন এমনটা করে থাকেন, তখন সেটা সত্যিই দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের পররাষ্ট্র নীতিই হচ্ছে, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথেই বৈরিতা নয়’। তাহলে কারও কারও এমন কার্যকলাপ মোটেই কাম্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
এসএইচএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।