গত ১০ মার্চ হাই কোর্ট এক আদেশে বলেছেন ‘জয় বাংলা’ এখন থেকে জাতীয় স্লোগান।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে মুক্তিকামী মানুষের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছে এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
আরও পড়ুন: রহস্যজনক অপতৎপরতায় মেতেছেন ববি হাজ্জাজ
দেখো গেছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরাসরি বক্তব্য দেওয়া শেষে ‘জয় বাংলা’ না দিয়ে বলেন ‘জয় বাংলাদেশ’ বলে স্লোগান দেন ববি।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে দেওয়া বিভিন্ন পোস্টেও ‘জয় বাংলাদেশ’ স্লোগান ব্যবহার করেন তিনি। বাদ রাখেননি ইউটিউবও। ইউটিউবে প্রকাশ করা নিজের বেশ কয়েকটি কনটেনটে ‘জয় বাংলাদেশ’ স্লোগান দেন ববি হাজ্জাজ।
অভিযোগ আছে, বাংলাদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’; উভয়কেই ‘ম্যানেজ’ করে স্লোগানের এমন বিকৃতি ঘটান ববি। ২০১৯ সালে অনুমোদন পাওয়া ববি হাজ্জাজের রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয়বাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম’। আর দলের স্লোগান করা হয় ‘জয় বাংলাদেশ’।
আরও পড়ুন: মুসাপুত্র হাজ্জাজের ভারতবিরোধী পাঁয়তারা কার মদদে
মূলত বিএনপিকে খুশি করতে ‘জাতীয়তাবাদী’ শব্দটি দলের নামের সঙ্গে আর আওয়ামী লীগকে বিভ্রান্তিতে রাখতে স্লোগানের সঙ্গে ‘জয়’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। ববির বেশ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ সূত্র এমনটিই জানিয়েছেন। তবে পারিবারিকভাবে পাকিস্তান ঘেঁষা ববির এই স্লোগান ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ থেকে অনুপ্রাণিত বলেও গুরুতর অভিযোগ আছে।
বিতর্ক আছে ববির রাজনৈতিক পরিচয় এবং আদর্শ নিয়েও। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে জিয়ার শাসনামলে আদম ব্যবসা করে ফুলে ফেঁপে ওঠেন ববির বাবা মুসা বিন শমসের। এরপর এরশাদ ক্ষমতায় এলে বাবার মিথ্যাচারের গুণে গুণান্বিত এই যুবক প্রলোভন দেখিয়ে ঘনিষ্ঠ হন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের। সুইস ব্যাংক থেকে অর্থ পুনরুদ্ধারের প্রলোভনে বাগিয়ে নেন গঠনতন্ত্রে না থাকা এরশাদের ‘বিশেষ উপদেষ্টা’র পদ। ২০১৪ সালে হঠাৎ হয়ে যান এরশাদের স্বঘোষিত মুখপাত্র।
সে বছরের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়ার বিরোধে দলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে ববির। অভিযোগ আছে, সে সময় জামায়াত মদদপুষ্ট বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ডে সমর্থন জুগিয়েছিলেন ববি। নির্বাচনের পর গড়ে তোলেন নিজস্ব রাজনৈতিক দল। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র হওয়ার উচ্চাভিলাসী স্বপ্নও দেখেছিলেন ববি হাজ্জাজ। সে সময় নিজ দল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেলে অবৈধ অর্থের জোরে বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। অবশ্য অবস্থা বেগতিক দেখে পরে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।
মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান বিকৃতি নিয়ে একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আমাদের জন্য শুধু একটা স্লোগানই ছিল না, যুদ্ধে বিনা ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস ছিল। আজও সেই চিন্তা করলে গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়। অথচ কেউ কেউ বিশেষ করে যাদের মাঝে সেই চেতনা নেই তারা এই স্লোগানকে বিকৃত করার চেষ্টা করছেন? কেন করছেন? তাদের রাজনৈতিক আদর্শও তো ঠিক নেই। আজ এই দলে, কাল ঐ দলে। তাদের আদর্শ দুইটি- ক্ষমতা ও টাকার লোভ। তাহলে তাদের কাছে আমাদের জাতির ইতিহাস নিরাপদ নয়। এদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘সত্য ব্যবসায়ী’ মুসার বিরুদ্ধে দুদকে চলছে ‘মিথ্যার’ মামলা
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০