মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় সংসদে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।
এর আগে বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। সংসদের এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে হারুনুর রশীদ একাদশ সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তার ওই শব্দগুলো সংসদ কার্যক্রম থেকে এক্সপান্স করা হয়। বক্তব্যের শেষদিকে সময় বৃদ্ধি না করায় ওয়াকআউটও করেন হারুন।
এছাড়াও হারুনুর রশীদ ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে বক্তব্য শুরু করেন। এ নিয়ে ডেপুটি স্পিকার প্রশ্ন তুলে বলেন, হঠাৎ করে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়লেন কেন? এটা দিয়ে কোনো বক্তব্য শুরুর রেওয়াজ আমি আমার ৭ বার সংসদ সদস্য জীবনে দেখিনি। এটা বলার ব্যাখ্যা চাইলে সংসদ সদস্য হারুন তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কড়া সমালোচনা করে সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিকলাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটা পরিবর্তন করা দরকার। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেন। সরিয়ে দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের বসান। কমিটেড লোকদের বসান।
হারুনুর রশীদ বলেন, চীনা বিশেষজ্ঞ দল বলেছে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিতে তারা হতাশ। এই যে সংকট তৈরি হয়েছে, এই সংকট জাতীয় সংকট। এই সংকট উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলুন। খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন।
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, এমন সময় করোনার আঘাত বাংলাদেশে এসেছে, যখন দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায়। রেমিটেন্স ছাড়া সমস্ত কিছু ছিল একেবারে নিম্নমুখী। ব্যাংকখাত শেয়ার বাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নাজুক। এই খাতগুলোরই দরকার ছিল প্রণোদনার। তাই দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। ফলে বাংলাদেশের জন্য করোনা মোকাবিলা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। আর সেই চ্যালেঞ্জর মাত্রা নির্ভর করছে বর্তমান পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে তার ওপর।
সরকারকে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে হারুন বলেন, সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সুশাসন ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় খুবই দরকার, যেটির এখন বড়ই অভাব রয়েছে। সরকার কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করেছে এটি পর্যাপ্ত কি না, বাস্তবায়ন সক্ষমতা আছে কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
বর্তমান বাজেটের সমালোচনা করে সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, উন্নয়নের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা বাদ দিতে হবে। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও রাজনীতির চিন্তা করতে হবে। উন্নয়নের ব্যয় কমাতে হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রী পরিষদের আকার ছোট করতে হবে। ব্যাংক কমিয়ে মানুষ বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সমাজে ঘুণ ধরে গেছে। চাঁদাবাজ, ঘুষখোর, মাদক সম্রাট, মানবপাচারকারী, অর্থ আত্মসাৎকারী, মানুষের হক বিনষ্টকারী, জালিয়াত ভূমিদস্যু, ব্যাংক লুটেরা, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতারা, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারীরা এখন সমাজের ভদ্রলোক এবং ক্ষমতাধর, অত্যন্ত প্রভাবশালী।
মাদক-মানব পাচারকারীরা কিভাবে সংসস সদস্য হয় প্রশ্ন তুলে হারুনুর রশীদ আরও বলেন, আমরা ক্ষমতার লোভে পথ হারিয়ে ফেলেছি। দুর্নীতির জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয়, জিরো টলারেন্স কোথায়? এই সংসদের একজন সদস্য মানব পাচারকারীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। কি করে সে সংসদে আসলো? তার স্ত্রী কি করে সংসদে আসলো? এসব বিষয় তদন্ত করতে হবে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সরকার। এই সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে তারা জীবনেও এখানে আসতে পারত না।
পুলিশ সরকার ও আওয়ামী লীগের গোলাম এবং দাস বাহিনীতে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, পুলিশের আইজিপি এখন নতুন নতুন নসিহত দিচ্ছেন। তিনি তো পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি এতদিন কি করেছেন। যারা দেশের মানুষের আমানত নষ্ট করেছেন, হক নষ্ট করেছেন, তার জবাবদিহিতা আপনাকে করতে হবে। গত নির্বাচনের সময় পুলিশকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুলিশের উচ্চতর পদ মর্যাদার ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে অংশগ্রহণ করানো হয়েছে। এই পুলিশ দিয়ে কোনোভাবেই সৎ প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পুলিশ সরকার ও আওয়ামী লীগের গোলাম এবং দাস বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
এমইউএম/এমএইচএম