ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভবন

ঢাকা: কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে নির্মিত ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রথম ধাপে উদ্বোধন হওয়া ভবনগুলোতে ফ্ল্যাট পেয়েছেন ৬০০টি পরিবার। ১০০১ টাকা নামমাত্র মূল্যে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে নির্মিত ৫তলা ২০টি ভবনসহ প্রকল্পের মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট।

সবগুলো ভবন নির্মিত হলে উদ্বাস্তু জীবনের অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ ছেড়ে সাজানো পরিপাটি দালানে উঠবেন মোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার।

প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল।

খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রকল্প এলাকায় ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দু’টি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে।

এছাড়াও থাকবে ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, পুকুর-খাল থাকবে পুরো প্রকল্প এলাকায়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ফ্ল্যাট পাবেন তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে। প্রকল্প এলাকায় একটি শুঁটকি মহালও থাকবে এবং এখানে পর্যায়ক্রমে বিক্রয় কেন্দ্র ও প্যাকেজিং শিল্পও গড়ে তুলবে সরকার।

ভবনগুলোর নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রেখেছেন। প্রথম ধাপে নির্মিত ভবনগুলোর নাম হলো-দোঁলনচাপা, কেওড়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালী, নীলাম্বরী, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, বাঁকখালী, ইনানী ও সাম্পান।

প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এটাই দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য এখানে যে পুনর্বাসন, এটাকে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প বলতে পারি। এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীতে বিরল।

২০১৯ সালে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের চেয়ারম্যান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের এ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করার কথাও উল্লেখ করেন প্রকল্প পরিচালক।

একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নেরই অংশ এ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এটি ছাড়াও গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে।

গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রথম প্রকল্প গ্রহণ করেন তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প শুরু হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবার ঘর পেয়েছে।

অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পাকা ও আধাপাকা দালানের ব্যারাক আকারে তৈরি হলেও বহুতল ভবনের আশ্রয়ণ প্রকল্প এটিই প্রথম।

প্রকল্পের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এটি অত্যন্ত নয়নাভিরাম একটি জায়গা। এ জায়গাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য মাটিকে অনেক উঁচু করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনের নিচের তলায় কোনো ফ্ল্যাট রাখা হয়নি। ফলে ঘূর্ণিঝড় হলে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকারও আশঙ্কা নেই।

** বস্তির খুপড়ি ঘর ছেড়ে দালানে উঠছে সাড়ে ৪ হাজার পরিবার

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০ 
এমইউএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।