ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৭ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

ঈদের আনন্দের পরিবর্তে ওদের বুক ভরা বেদনা…

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:২৫, আগস্ট ১, ২০২০
ঈদের আনন্দের পরিবর্তে ওদের বুক ভরা বেদনা… আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা/ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: আগে তা ঝায় টুকটাক কাজ কুরি সংসার চুলতু। আড়াই মাস হুয়ি গেছে এখনো বাড়ি যাতি পারিনি।

সেই কবে কপোতাক্ষা গাংয়ের ভেড়ি ভেঙ্গি আমাগি ঘর বাড়ি ভাষায় নে গে। এখনো প্রতিদিন জোয়ার ভাটা হুতিছ বাড়ির পর দে। আমরা এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। আমাগে আবার ঈদ কিসের?

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বিধ্বস্ত খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেন্টারে থাকা রীনা আক্তার ঈদ নিয়ে আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন।

শনিবার (১ আগস্ট) ঈদের দিন সকালে বাংলানিউজের কথা হয় গৃহিণী রীনার সঙ্গে।

এ সময় তিনি জানান, দিনমজুর স্বামী, দুই সন্তার নিয়ে তিনি আড়াই মাস ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। গরিবেরও ঈদে আনন্দ করতে মন চায়। কিন্তু পানির মধ্যে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায়ও যাওয়া যায় না।

একই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা খাদিজা খাতুন বলেন, ঈদের আগের দিন একজন এক প্যাকেট সেমাই দিয়েছে। এছাড়া কোনো কিছু পাইনি। খুবই কষ্টে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছি। স্বামী অসুস্থ কোনো আয় রোজগার নেই। জানি না কবে বাড়ি ফিরবো। উত্তর বেদকাশি এলাকার আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি বলেন, আড়াই মাস হুয় গে আমরা এই ওয়াপদার ওপরে ত্রিফল টাংগায় বাস করি। আমাগি খাওয়া দাওয়াসহ চলাফেরার রাস্তায় ও এখন গলা সমান পানি রইছে। এখনো আমাগি কাটমারচর বেড়িবাঁধ বাধা হয়নি। এভাবে আমরা না পারতিছ কাজ করতি না পারতিছ খাওয়া দাওয়া করতি।

দুর্গতরা বলেন, দুইটা ঈদ গেলো। নতুন জামা তো দূরের কথা, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে সন্তানের গা থেকে কাদা পানিই মুছতে পারছি না। কিছুই নেই, কর্মও নেই প্রায় আড়াই মাস। আমরা যে কি করে বাঁচবো তা ওপর আল্লাহ জানে।

দিশেহারা এ মানুষগুলো শুধু চায় নদীপাড়ে সুরক্ষিত বাঁধ আর নিরাপদে বসবাসের সুবিধা।

এম এম সাইফুল ইসলাম নামের কয়রার এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, কয়রার দিনমজুর শ্রমিকরা খুব কষ্টে আছেন। উত্তর বেদকাশীর কাটমারচরের খারাপ অবস্থা, আম্পানের পর থেকে এখনো তেমনি আছে। জোয়ার-ভাটা হয় প্রতিনিয়ত। অন্য অন্য যায়গায় বর্তমান রিং বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশের পথ বন্ধ করা হয়েছে। আড়াই মাস হলেও এখনো ঘরে ফেরা হয়নি অনেকের। ঝড় শেষ হয়েছে প্রায় আড়াই মাস। অথচ ঘরে ফিরতে পারেনি হাজারও। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা সাইক্লোন শেন্টার ও ওয়াপদার ওপর রয়েছেন। কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গত ২০ মে উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কয়রার বিস্তৃর্ণ এলাকা। করোনাকালে সব হারা এসব মানুষগুলো অনেকেই এখনও কর্মহীন। তারপরও সাইক্লান শেন্টার ও বেড়িবাঁধের উপর অনেকে সীমাহীন কষ্ট নিয়ে বাসবাস করছেন। ভয়াবহ আম্পানের পর থেকে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কয়রার হাজার হাজার পানিবন্দি মানুষ। যত দিন যাচ্ছে খাদ্য আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এবং উচু বাঁধে এবং সড়কে আশ্রয় নিয়েছে তাদের বিড়ম্বনার যেন কোনো শেষ নেই। তিনি জানান, আম্পানে বিধ্বস্ত কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটমারচর, হাজতখালি, কাটকাটা এলাকায় এখনও চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। এসব এলাকার মানুষের ঈদের কোনো আনন্দ নেই।

ইমতিয়াজ বলেন, একদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। চাকরি-কর্ম হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন অনেকে। অপরদিকে আম্পানের পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব পরিবারে ঈদের আনন্দের পরিবর্তে বিরাজ করছে বুকভরা বেদনা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।