রংপুর: ডাকাতির উদ্দেশ্যেই দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহিদা খানমের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের (৬৫) কথায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাসপাতালে বাংলানিউজের এ প্রতিনিধির সঙ্গে তার কথা হয়।
তিনি বলেন, রাত ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কেবল শুয়েছি, ঘুম ঘুম লাগছিল। এমন সময় মেয়ের চিৎকার শুনে ওপর তলায় যাই। মেয়ে আমাকে ডাকছিল যে ঘরে কেউ ঢুকেছে। আমি ওপর তলায় গিয়ে দেখি মুখশধারী এক ব্যক্তি ওর কাছে চাবি চাচ্ছিল। টাকা-পয়সা ও গহনা কোথায় জানতে চাচ্ছিল, নইলে আমার নাতিকে মেরে ফেলবে। একপর্যায়ে
তার সঙ্গে আমার ধ্বস্তাধস্তি হয়। ওই লোক হাতুড়ি দিয়ে আমার ঘাড়ে আঘাত করলে আমি মেঝেতে পড়ে যাই। এরপর সে আমার মেয়ের কাছে চাবি ও টাকা পয়সা চাইতে থাকে। তারপর আর কিছু আমি বলতে পারি না।
পূর্বের কোনো শত্রুতার বা অন্য কোনো কারণে এ হামলা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে শুধু চাবি আর টাকা পয়সা কোথায় জানতে চাচ্ছিল। এ রকম কিছু বলে নাই। আর আক্রোশ বা তেমন কোনো কথাও বলে নাই। মুখোশ পরা ছিল বলে চিনতে পারি নাই। বারবার শুধু চাবি আর টাকা-গহনা চাচ্ছিল। পরে আমার মেয়েকেও সে আঘাত করে। কিন্তু আমি তা বলতে পারি না। বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙে সে বের হয়ে যায়।
সে ঢুকলো কীভাবে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের মূল গেট বরাবরই খোলা থাকে। পাশে গার্ড ছিল। সে হয়তো টেরই পায় নাই।
এর আগে বুধবার দিনগত রাত ৩টার দিকে ঘোড়াঘাটে নিজের সরকারি বাংলোয় হামলার শিকার হন ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা। এরপর তাকে ও তার বাবাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার বাবা চিকিৎসাধীন। ওয়াহিদা খানমের মাথার বাম পাশে গুরুতর আঘাত রয়েছে। সেখানে দেবে যাওয়ায় ডান হাত ও পা অবশ হয়ে গেছে। এছাড়া মাথার পানি গহ্বরে রক্তক্ষরণ হয়েছে৷ বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে মা ও স্বামী মেজবাউল হোসেন রয়েছেন।
ইউএনওর চার বছরের ছেলের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। বর্তমানে সে রংপুর সার্কিট হাউজে আছে। ওয়াহিদা খানমের স্বামী মেজবাউল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জের ইউএনও হিসেবে কর্মরত।
ওয়াহিদার বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলায়। আর স্বামীর বাড়ি রাজশাহীতে।
বিষয়টি নিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৩ এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করছি আমরা।
এ বিষয়ে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব জানান, এখনো হামলার কারণ জানা যায়নি। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি। তদন্ত করে জানা যাবে এ হামলায় কে জড়িত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০
এসআই