ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৫ বছরের শিশু আইসিইউতে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরল

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০
৫ বছরের শিশু আইসিইউতে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরল ফাইল ফটো

ঢাকা: কিছুক্ষণ পরপর পাঁচ বছরের মেয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে, আর বায়না ধরে-'বাবা কোথায়, আমি বাবার কাছে যাবো। ' বাবাকে না দেখতে পেয়ে ক্ষণে ক্ষণে বাড়ে শিশুটির কান্না।

কিছুতেই শিশুটির মা আর সান্ত্বনা দিতে পারছিল না। একে একে চারদিন অতিক্রম হয়ে গেছে তার বাবাকে দেখছে না সে। অবশেষে আজ আইসিইউতে সে বাবাকে দেখতে পেয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আমজাদ হোসেন (৩৭)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। এদিকে স্ত্রী তানজিলা আক্তার তার পাঁচ বছরের কন্যা আরিফা আক্তার আমেনাকে নিয়ে আইসিইউর বাইরে অপেক্ষা করছেন।  

আমেনা বলেন, কিছুক্ষণ পরপর মেয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে, আর বায়না ধরে-'বাবা কোথায়, আমি বাবার কাছে যাবো। ' বাবাকে না দেখতে পেয়ে ক্ষণে ক্ষণে বাড়ে শিশুটির কান্না।

এরপর হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনুমতি নিয়ে মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দগ্ধ বাবাকে দেখতে আইসিইউ'র ভেতরে যায় শিশুটি। বেডে সোয়া বাবাকে দেখে মায়ের কোল থেকে বাবার কাছে ছুটে যায় শিশু আমেনা। বাবার বুক জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে শিশুটি। দগ্ধ বাবাও মেয়ের চোখে জল দেখে কেঁদে ওঠেন।  

.

গত ৪ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরণের ঘটনার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধ বাবাকে চারদিন পর দেখতে পেয়েছে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আমেনা।  

চিকিৎসাধীন দগ্ধ আমজাদ হোসেনের স্ত্রী তানজিলা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে আনার পর প্রতিদিনই আমার মেয়ের বায়না, সে বাবাকে দেখবে। বাবাকে আদর করবে। ভেতরে যেতে দেয় না বলে আমার মেয়ে কান্না করে। তারে কোনো কিছুতেই বোঝানো যায় না। মঙ্গলবার দুপুরে ওর বাবার কাছে নিয়ে গেছিলাম। মেয়ে তার বাবাকে দেখে লাফালাফি করতে থাকে। সে বাবাকে আদর করবে, বাবার কাছে যাবে, এক পর্যায়ে তার কান্না থামার জন্য তার বাবার কাছে কিছুক্ষণ সময় মেয়েকে দেওয়া হয়।

দগ্ধ আমজাদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, চিকিৎসকরা বলছে সে ভালোর দিকে। কিন্তু আমার স্বামী এখনও আইসিইউতে আছেন। দুপুরে আমি ভেতরে যাইয়া তাকে (স্বামী) ডিম আর মুরগির সুপ খাওয়াইছি। ডাবের পানি খাওয়াইছি। আমার সঙ্গে কথা বলছে। আর তার ভায়রা ইমরান হোসেনের কথা জিজ্ঞাসা করে।  

বলে ইমরান কেমন আছে। ও সুস্থ আছে কিনা। কিন্তু সে (স্বামী) জানে না গতকাল (সোমবার) তার ভায়রা ভাই মারা গেছেন। ইমরানের মারা যাওয়ার বিষয়টি আমরা তার কাছে গোপন রেখেছি। তবে তিনি যে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন সেটি তার ভাবনায় নেই।  

তানজিলা হাসপাতালের আইসিইউর বাইরে ফ্লোরে বসে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলছিল, আইসিইউতে থাকা দগ্ধ রোগীদের একের পর এক মৃত্যুর খবর আসছে। চিকিৎসক আর ওয়ার্ড বয় বের হলেও ভয়ে থাকছেন রোগীর স্বজনরা। রোগীর নাম বলে যখনই স্বজনদের ডাকা হয় তখনই সবাই আতকে ওঠে। কারণ আইসিইউ থেকে এভাবে তারা বের হয়েই মৃত্যুর সংবাদ দিচ্ছে স্বজনদের।

এর আগে শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এরমধ্যে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের একাধিক তদন্ত কমিটি বিস্ফোরণের কারণ জানতে ঘটনাস্থলে তদন্ত করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০২২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০
এসজেএ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।