ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পেঁয়াজের পর আলু নিয়ে তেলেসমাতি চলছে বাজারে!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
পেঁয়াজের পর আলু নিয়ে তেলেসমাতি চলছে বাজারে! ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: পেঁয়াজের পর এবার আলু নিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। লাগামহীনভাবে বাড়ছে প্রতিদিনের রান্নায় অপরিহার্য এই পণ্যটির দাম।

 

কৃষি বিপণন অধিদফতর আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও রাজশাহীতে তা কার্যকর হয়নি এখনও! অথচ কৃষি বিপণন অধিদফতর তিনস্তরে আলুর দাম নির্ধারণ করেছে। তাদের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশে আলুর পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। আর পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা আর হিমাগার পর্যায়ে কেজি ২৩ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে।

তবে চাল, পেঁয়াজ, শাক-সবজির পর এবার আলুর এ রেকর্ড দামে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজশাহীর স্বল্প আয়ের মানুষ। এক মাস আগেও রাজশাহীর বাজারে যে আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় পাওয়া যেতো। মাস ঘুরতে না ঘুরতে সেই আলুর দাম এখন বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী সাহেব বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো চড়া দামেই আলু বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। অথচ হিমাগার পর্যায়ে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, দু'দফা বন্যায় জেলার সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে চাহিদার তুলনায় আলুর চাষও কম হয়। এছাড়া বাজারে বর্তমানে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর সঙ্গে আলুর দাম বাড়ারও সম্পর্ক রয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলুরও দাম বাড়ছে।

এদিকে, করোনায় শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা আলুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তার জন্য ত্রাণ হিসেবে চালের পাশাপাশি আলুও দেওয়া হচ্ছিল। এসব কারণে করোনার সময় মার্চের শুরুতে প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ টাকা থাকলেও তা এখন হু-হু করে বাড়ছে।

রাজশাহী মহানগরের সাহেব বাজারের ব্যবসায়ী মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আলুর উৎপাদন কম হওয়া ও চলমান বন্যায় আলুর ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ অন্যান্য সবজির দাম বাড়ার সঙ্গেও আলুর দাম বাড়ার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। তবে এখন স্থানীয় পর্যায়ে আলু খুব বেশি নেই, আলুর যোগান কমে আসায় দাম বাড়ছে। বাজারে নতুন আলু উঠলে দাম কমবে।

আরেক ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আলু কিনে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিতে বহন খরচ, চাঁদা, পরিবহন ভাড়া ও দোকান ভাড়া লাগছে। শুধু তাই নয়, পাইকারি বাজারে আলুর দামও চড়া। বেশি দামে পাইকারি বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে। তাই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।

ছবি: বাংলনিউজ

আর সাধারণ ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট। সুযোগ বুঝে তারা বিনা কারণেই আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অশুভ চক্র চাল, পেঁয়াজের সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। এবার অন্যান্য সবজির দাম বাড়ায় আলু নিয়ে কারসাজি শুরু করছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং না করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আরও সুযোগ পাচ্ছে।

সাহেব বাজারে আসা রিকশাচালক রহিমুল্লাহকে আলুর দাম বাড়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই তিনি অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়ায় অসহায় হয়ে পড়েছি। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। মাছ-মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আলুর ওপর নির্ভর ছিলাম। এখন আলুর দামও বাড়ছে। আমরা কি খেয়ে বেঁচে থাকবো?

সাহেব বাজারে কেনাকাটা করতে আসা লোকমান হোসাইন বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে তো বিক্রেতারা আলু বিক্রি করছে না। বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিং নেই। মাঝেমধ্যে দেখি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কোনো সুফল পাই না।

এদিকে, রাজশাহীতে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। সরকার নির্ধারিত বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাজশাহীতে হিমাগার পরিদর্শন করেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহীর হিমাগারে এ অভিযান চালায় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে বেশি দামে আলু বিক্রি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি।

এসময় হিমাগারে অতিরিক্ত আলু মজুদ করা আছে কিনা তা দেখা হয়। পাশাপাশি আলু মজুদ রেখে কেউ যেন ফায়দা না লুটতে পারে, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
এসএস/ইউবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।