ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘কাচের ঘরে’ হাত-পা নাড়ছে সেই নবজাতক

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
‘কাচের ঘরে’ হাত-পা নাড়ছে সেই নবজাতক

ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাপসাতালের চিকিৎসক যে নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেছিলেন, সে এখন হাপসাতালের এনআইসিইউয়ের ‘কাচের ঘরে’ হাত-পা নাড়ছে।  

বর্তমানে ওই নবজাতকটি ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের নবজাতক নিবিড় যত্ন ইউনিট (এনআইসিইউ) কাচের ঘরে রয়েছে।

মুখে অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় হাত-পা নাড়ছে সে।  

রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ড থেকে নবজাতকটির বাবা ইয়াসিন মোল্লা বলেন, আমার বাবু এখন কাচের ঘরে আছে। মুখে অক্সিজেন লাগানো। ওই কাচের ঘরে শুয়েই হাত-পা মোড়ামুড়ি করছে। আমার বড় মেয়ে ইসরাত জাহানের বয়স নয় বছর। সে হাসপাতালে এসে তার বোনকে দেখে গেছে। সে আমাকে বলে, আব্বু আমার বোনটাকে ডাক্তাররা কেন আগে মৃত বলেছে, ডাক্তারদের জিজ্ঞেস করো।  

তিনি আরও বলেন, ডাক্তাররা জানান যে আমার মৃত মেয়ে হয়েছে। এ কথা শুনে দাফন করতে নেওয়ার পর আমার সন্তান নড়েচড়ে উঠলে আমি কবরস্থান থেকে দ্রুত তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে নিয়ে আসার পরও বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছি। ওই নবজাতক ওয়ার্ডের অনেকেই বলেন, এখানে সিট নেই, বাইরে নিয়ে যান। বাচ্চার অবস্থা ভালো না। অথচ দায়িত্বরত সবাইকে বলেছি, আমার বাচ্চাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে, এখন নড়ছে, তাই আপনাদেরই চিকিৎসা দিতে হবে। পরে যখন এ খবর সাংবাদিকসহ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পরল, তখন ওই ওয়ার্ডের সবাই নড়েচড়ে বসে। তারপর সব কিছুই পাওয়া গেলো।

আরও পড়ুন: ঢামেকে মৃত নবজাতক, দাফন করতে গিয়ে জীবিত!

কেন জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে? কার গাফিলতি আছে? এটাই বের করার জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) রাতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জিকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শিখা গাঙ্গুলি, অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুব্রত কুমার মণ্ডল ও হাসপাতালের সহকারী (প্রশাসন)।

পরিচালক জানান, শুক্রবার থেকেই তারা তদন্ত শুরু করেছেন। তিনদিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপরই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নবজাতকটি এখন এনআইসিইউতে ভর্তি রয়েছে। অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। তার মাও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে তার অবস্থা ভালো। নবজাতকটি ইনম্যাচিউরড (অপরিণত) অবস্থায় হয়েছে। এ অবস্থায় জন্ম নিলে সাধারণত নবজাতক বেঁচে থাকে না। তবে নবজাতকটি হওয়ার পর তাকে আমাদের চিকিৎসকরা কয়েক ঘণ্টা অবজারভেশনে রেখেছিলেন। তার কোনো হার্টবিট (হৃদস্পন্দন) না পাওয়ার পরেই তাকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন তারা।

এর আগে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) ভোরের দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এসে ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে স্বাভাবিকভাবে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ইয়াসিন মোল্লার স্ত্রী শাহিনুর।   তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মালেঙ্গা গ্রামে। জন্মের পরপরই ওই নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে ওই নবজাতককে একটি প্যাকেটে ভরে ইয়াসিনের কাছে হস্তান্তর করে চিকিৎসক বলেন, নবজাতকটি মৃতই জন্ম নিয়েছে। পরে ওই প্যাকেটে থাকা নবজাতকটিকে নিয়ে সকালে ইয়াসিন আজিমপুর কবরস্থানে যান। সেখানে অর্থনৈতিক কারণে তাকে দাফন করতে না পারায় একপর্যায়ে ইয়াসিন নবজাতকটিকে নিয়ে বসিলা কবরস্থানে গেলে সেখানকার লোকজন দাফনের জন্য প্যাকেট খুললে নবজাতকটিকে নড়ে উঠতে দেখেন। এ সময় চমকে যান ইয়াসিন। পরে তিনি দ্রুত নবজাতককে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান।  

বাংলাদেশ সময়: ০১২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
এজেডএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।