লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) হত্যার হুমকি ও ১৯টি চেক ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দুইটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
রোববার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্টেনোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে জিডি দুইটি দায়ের করেন।
এর আগে সকালে অফিসে গিয়ে অফিস সহকারীর কাছ থেকে ফাইলপত্র নিয়ে প্রকাশ্যে চেক পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। কাজ না পেলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশ্রব্য ভাষায় গালাগালসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্ত বেষ্টনীর সুবিধাভোগির তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। বিধি বহির্ভূত ভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় এবং কাজ সমাপ্ত না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, তার কথামত কাজ না করায় একজন মহিলা কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানীর ঘটনা ঘটানোর হুমকী দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা খুলতে গেলে তার ছবি তুলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একই সাথে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন চেয়ারম্যান ফারুক।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতে ১৭ জন অফিসার ও ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
এসব ঘটনায় নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে আদিতমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ দিকে রোববার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেরা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস অফিসে এসে তার অফিসের স্টানোটাইপিষ্ট হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে ফাইলপত্র নিয়ে ১৯টি চেক পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্টেনোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে রোববার (১৫ নভেম্বর) আদিতমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইউএনও মহোদয় নিরাপত্তা চেয়ে একটি ও চেক পাতা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় অপর একটি জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অপর দিকে ইউএনওসহ ১৭জন অফিসারের দায়ের করা অভিযোগটি তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। রোববার (১৫ নভেম্বর) অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা লালমনিরহাটের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব রফিকুল ইসলাম দিনভর উপজেলা পরিষদ হলরুমে বিভিন্নজনের স্বাক্ষাকার গ্রহণ করেন।
ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। তাই আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছি। এছাড়াও আমার ও চেয়ারম্যানের যৌথ স্বাক্ষরীত ১৯টি চেক পাতা তিনি ছিঁড়ে ফেলেছেন। সেটা নিয়েও জিডি করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার (১৪ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তারা দরবদ্ধ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তবে রোববার (১৫ নভেম্বর) জিডি প্রসঙ্গে তার সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
কেএআর