লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের তদন্ত করলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব ভূঞা।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) দিনভর উপজেলা পরিষদ হল রুমে উভয় পক্ষের অভিযোগকারীদের লিখিত-মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার।
তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব ভূঞা বলেন, তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে নয়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঘটনার তদন্তে এসেছি। অনেকের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নিয়েছি। পর্যালোচনা করে দেখে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তবে কতজনের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নেওয়া হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা তিনি বলেননি।
এর আগে সোমবার (১৬ নভেম্বর) একই ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের ৩৭ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দের বিষয়ে ইউএনওসহ ১৮ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেন চেয়ারম্যান।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধিসম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করা হয় ‘(বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?)’। এভাবে গালমন্দ করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ওই রাতে ইউএনওসহ ১৮ জন কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ১৬ নভেম্বর ৩৭ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় জেলা প্রশাসন। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) সরেজমিন তদন্ত করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব ভূঞা। এ সময় জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন।
নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার (১৫ নভেম্বর) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় জিডি (নম্বর-৫৫৮) করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একই দিন যৌথ স্বাক্ষরিত উপজেলার রাজস্ব তহবিলের ব্যাংক হিসাবের ১৯টি চেকের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। যা নিয়েও আদিতমারী থানায় জিডি (নম্বর-৫৫৯) করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের
স্টানোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান।
একই ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে ইউএনওর বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় জিডি করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। ইউএনওসহ অফিসারদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনয়ন করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। ইউএনওর নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানান তিনি। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ৯ দফা অভিযোগ তুলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের প্রতি অনাস্থার প্রস্তাব তুলে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন উপজেলার ৮ জন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান।
তদন্ত শেষে আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস সাংবাদিকদের বলেন, শুধুমাত্র উভয়পক্ষের অভিযোগকারীদের স্বপক্ষীয় বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে স্থানীয় সচেতন মহলের সঙ্গেও কথা বলার অনুরোধ করেছি। কিন্তু সেটা করা হয়নি।
** আদিতমারী ইউএনও-উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
আরএ