ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মা সেতুর সর্বশেষ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
পদ্মা সেতুর সর্বশেষ পদ্মা সেতু

ঢাকা: বিজয়ের মাসে পদ্মা সেতুতে বসলো সর্বশেষ ও ৪১তম স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হলো প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

শেষ স্প্যান বসানোর দিনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় সরকার।  

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টা ০২ মিনিটে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মাওয়া প্রান্তে মূল পদ্মা সেতুর ১২ এবং ১৩ নম্বর পিয়ারের উপর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি সফলভাবে স্থাপন করা হয়।

এর পরই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয়েছে। একজন মানবিক ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই সব অসম্ভবকে সম্ভব করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে আমরাও পারি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে শত বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান, বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের।

আর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে অর্থাৎ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।  

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের তথ্য অফিসার শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ জানান, সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

তিনি আরও জানান, মূল সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে ১ হাজার ৩৩৩টি এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্লাবের মধ্যে ১ হাজার ৯৪২টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার গার্ডারের মধ্যে ৩২১টি স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি শতকরা ৯১ শতাংশ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি শতকরা প্রায় ৭৬ শতাংশ। ইতোমধ্যে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা জানিয়ে তথ্য অফিসার শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ জানান, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৮২ দশমিক ৫০ ভাগ।

সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর পর পরই রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আগামী ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি ৮ বছর সেতু বিভাগের সচিব ছিলাম। ফলে আমি এখনও এটিকে দেখাশোনা করে থাকি।  

পদ্মা সেতুকে ঘিরেই দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত হবে এবং ওই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে- এমনটাই মনে করছে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।  

১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ই পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তা শুরু হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় ফিরে পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আসে বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু ‘সম্ভাব্য দুর্নীতির’ অভিযোগসহ টানাপোড়েন শেষে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান।

মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি কোম্পানি সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
এমআইএইচ/জেআইএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।