বরিশাল: নয় মাসের তদন্তের সূত্র ধরে টানা নয়দিনের অভিযানে পৃথক দুই জেলা থেকে অভিনব কায়দায় চোরচক্রের নয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এ চক্রের সদস্যরা গত ১৯ মার্চ দিনে-দুপুরে অভিনব কায়দায় বরিশাল নগরের কাটপট্টি এলাকার আশ্রাব অ্যান্ড সন্স জুয়েলার্সে চুরি সংগঠিত করে ১২৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহবুদ্দিন খান জানান, গত ১৯ মার্চ বরিশাল নগরের কাটপট্টি এলাকার আশ্রাব অ্যান্ড সন্স জুয়েলার্সে দিনে-দুপুরে ক্লুলেস চুরির ঘটনা ঘটে।
মামলার অভিযোগের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গত ১৯ মার্চ দুপুর সোয়া ২টার দিকে জুয়েলার্সের মালিক তার দোকান বন্ধ করে দুপুরের খাবার খেতে যান। এ সময় আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা আন্তঃজেলা পেশাদার সংঘবন্ধ চোরচক্রের সদস্যরা পর্দা হিসেবে লুঙ্গি ও কাপড় ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় দোকানের তালা কেটে ভেতরে ঢুকে। পরবর্তীতে তারা ১২৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়।
এ ঘটনায় দোকান মালিক নগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় ওইদিনই অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে ঘটনাটি গুরত্বের সহিত আমলে নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার রাসেলকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তের শুরুতে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোরচক্রের সদস্যদের চেহারা শনাক্ত করার পাশাপাশি চুরি করার অভিনব কৌশলের বিষয়ে অবগত হয় তদন্ত দল। ফলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এ ধরনের চুরি বরিশাল নগরে প্রথমবারের মতো সংগঠিত হয়েছে।
শাহবুদ্দিন খান জানান, এরপর গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধার অভিযানের শুরুতে সিএমপির হালিশহর থানা এলাকায় ছদ্মবেশে অবস্থান নেয় কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার রাসেলের একটি টিম। তারা প্রথমে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার লিটন (২৮) কে দু’টি স্বর্ণের আংটি, দু’টি মোবাইল ও একটি সিমসহ আটক করে। এরপর তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, টানা নয়দিনের অভিযানে কুমিল্লা থেকে বরিশাল নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার সুমন (৩৭), চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার লিটন (২৮), কুমিল্লার মুরাদনগরের হাসান (১৭) ও আলাউদ্দিন (২৫), দেবিদ্বার এলাকার জামাল (৪০) ও তিতাস এলাকার অলি (৩০) কে আটক করা হয়। এদের মধ্যে সুমন, অলি, জামাল ও লিটন আদালতে দ্বায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এদিকে আটক জামালের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলার বাকলিয়া থানার বউবাজার এলাকায় স্বর্ণা জুয়েলার্সের মালিক পবণ রায় ও আটককৃত সুমনের তথ্য মতে, শিফা জুয়েলার্সের মালিক আলম হোসেনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি নেকলেস ও নয়টি আংটি উদ্ধার করা হয়। যা বাদী কর্তৃক শনাক্ত করাও হয়।
এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চাঁদপুরের কচুয়া এলাকার জসিম ওরফে জনি (২৮) ও লক্ষ্মীপুরের শুক্কুর (২০) কে গ্রেফতারে এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে চোরচক্রের সদস্যদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রথমে চোরচক্রের গ্যাং লিডার সুমন বরিশাল এসে দোকানটি চিহ্নিত করে। পরবর্তীতে গত ১৭ মার্চ আটক অলি চোরচক্রের সাতজন সদস্য নিয়ে বরিশালে আসে। তারা বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে এবং লঞ্চঘাটে ভাই ভাই হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে নদীর পাড়ে ফাঁকা জায়গায় বসে চুরির বিষয়ে পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন দুপুর ১টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। দিনে-দুপুরে আশপাশের দোকান খোলা থাকা অবস্থায় অত্যন্ত দুঃসাহসীকতার সঙ্গে এ চুরিটি করতে সমর্থ হয়। পুলিশ চেকপোস্টের ভয়ে তারা বাসে না গিয়ে লঞ্চযোগে ঢাকা যাওয়ার পরিকল্পনা করে। লঞ্চে ওঠার পরে তাদের মোবাইল ও সিমগুলো পানিতে ফেলে দেয়। লঞ্চের কেবিনে বসে চোরচক্র নিজেদের মধ্যে স্বর্ণালঙ্কারগুলো ভাগ করে নেয়। সুমন চুরির অভিযান পরিচালনা খরচ বাবদ বেশি পরিমাণ স্বর্ণ রেখে দেয় এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামে শিফা জুয়েলার্সের মালিক আলম হোসেনের কাছে বিক্রি করে।
তিনি জানান, ‘আশ্রাব অ্যান্ড সন্স জুয়েলার্স’ নামে দোকানে দিনে-দুপুরে ক্লুলেস চুরির ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যবসায়ীদের মনে স্বস্তি ফিরেয়ে আনে। চুরির ঘটনাস্থলে সিসি টিভি ক্যামেরা থাকায় উপরোক্ত চুরির ঘটনাটি ডিটেকশন করা সম্ভব হয়েছে। অতি দ্রুত প্রত্যেক বাড়িতে, মহল্লায়, মার্কেটে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান পুলিশ কমিশনার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
এমএস/আরবি