জয়পুরহাট: জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈলে ট্রেনের ধাক্কায় বাসের ১২ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই রেলক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যান নয়নকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ।
তবে দুর্ঘটনার পর থেকে এখনো লাপাত্তা রয়েছে ওই রেলগেটে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালনকারী তিন গেটম্যান নয়ন, মঞ্জু ও আব্দুর রহমান।
এছাড়াও এ ঘটনায় সান্তাহার জিআরপি থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। নিহত ১২ জনের মরদেহ দাফন করেছে স্ব স্ব পরিবার।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এর আগে ২০০৬ সালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার আমট্র রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-বাস দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত হয়। ২০০৯ সালে জয়পুরহাট সদর উপজেলার কাশিয়াবাড়ী এলাকার রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় বালুবাহী ট্রাকের ১৩ জন নিহত হয়। বছরের পর বছর বিভিন্ন রেলক্রসিংয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত রেলওয়ে বিভাগের পক্ষ থেকে চোখে পড়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই এমন দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ জানিয়েছে জয়পুরহাটবাসী।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যেই দায়িত্বরত গেটম্যান নয়নকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও সান্তাহার জিআরপি থানায় অপমৃত্যুর দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
অপরদিকে রোববার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে অবস্থান করা পাকশী রেলওয়ের মেকানিক্যাল অপারেটর তাহসিফ চৌধুরী পৃথিবী বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে তারা ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামত করছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে দায়িত্ব পালনকারী তিন জন গেটম্যান নয়ন, মঞ্জু ও আব্দুর রহমান লাপাত্তা রয়েছে। এদের মধ্যে দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বে অবহেলাকারী গেটম্যান নয়নকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ খুঁজছে।
তিনি আরো জানান, সান্তাহার থেকে বিরামপুর পর্যন্ত পাকশী জংশনে মোট ৩৮টি রেলগেট আছে। এর মধ্যে ১৮টি ইঞ্জিনিয়ারিং রেলগেটে গেটম্যান আছে। বাকি ২০টি ট্রাফিক রেলগেটে গেটম্যান নেই।
গত শনিবার সকাল ৭টায় পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি পাঁচবিবি রেলস্টেশন ছেড়ে জয়পুরহাট রেলস্টেশনে আসছিল। এসময় জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা হিলিগামী বাঁধন পরিবহন নামে (বগুড়া-জ-১১-০০০৮) যাত্রীবাহী একটি বাস গেট খোলা থাকায় পুরানপৈল রেলক্রসিং অতিক্রম করছিল। এ সময় উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটির সঙ্গে বাসটির ধাক্কা লাগে। ট্রেনটি বাসটিকে ঠেলে পুরানপৈল রেলক্রসিং থেকে দক্ষিণে প্রায় ৫০০ গজ দূরে গিয়ে থেমে যায়। এতে বাসটি চুরমার হয়ে ঘটনাস্থলেই ১০ জন মারা যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো দুই জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ট্রেনের দুটি বগির ছয়টি চাকা লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের ইঞ্জিন ও রেলের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা পর ওই দিনই দুপুর আড়াইটার দিকে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সব ধরনের ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল ও জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-বাস দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ও জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
অন্যদিকে জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজা হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রেলওয়ের গঠিত কমিটিকে চার কার্যদিবস ও জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২০
আরএ