ঢাকা: রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণে বৈচিত্র্যতা, মান ও উৎকর্ষতা সাধনের জন্য যুগোপযোগী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্দেশে সাড়ে চারশত কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তিকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফরউদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) চটগ্রামের মিরশরাই এ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে বেজা কর্তৃক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ইসিফোরজে প্রকল্পের কাছে ১০ একর জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য সচিব জাফরউদ্দিন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইসিফোরজে প্রকল্পের মাধ্যমে রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণে বৈচিত্র্যতা, মান ও উৎকর্ষতা সাধনের জন্য যুগোপযোগী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্দেশে চারটি টেকনোলজি সেন্টার নির্মাণ করতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, মিরশরাই, চট্টগ্রামে বিশ্বমানের টেকনোলজি সেন্টার নির্মাণের জন্য বেজার কাছ থেকে ১০ একর জমি বুঝে পাওয়া গেলো। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি কর্তৃপক্ষ ইসিফোরজে প্রকল্পের কাছে ৪ দশমিক ০৪ একর জমি হস্তান্তর করেছে, বাকি দু’টোর জমিও পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের অধীনে, সাড়ে চারশত কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যার উদ্দেশ্য হলো তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে আমাদের রপ্তানির সম্ভাবনা বেশি রয়েছে চারটি পণ্যে। এগুলো হলো-চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফুটওয়্যার, প্লাস্টিক গুডস ও হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য। উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে থাকবে: ইলেক্ট্রনিক ও ইলেকট্রিক গুডস, ব্যাটারি ও অ্যাকুমুলেটর, বাইসাইকেল, অটোমোবাইলস, পার্টস, ডাই, মোল্ড এবং ফাউন্ড্রি এদের এক্সপোর্ট লিড প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের যে অভীষ্ট লক্ষ্য বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০, সরকারের ভিশন তথা ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো।
বাণিজ্যসচিব বলেন, দেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকার এ অঞ্চলের গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং ব্যবসায়ী মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বেজার মাধ্যমে শিল্প অবকাঠামো উন্নয়নে দেশের সর্ববৃহত পরিকল্পিত শিল্প নগরী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, মিরশরাই গড়ে তুলছে। এখানে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্বমানের এ টেকনোলজি সেন্টারে হালকা প্রকৌশল ও প্লাস্টিকস খাতসহ সংশ্লিষ্ট ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের শিল্পসমূহের জন্য টেকসই প্রযুক্তিগত সেবা, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক বাজার সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ, প্রয়োজনীয় কারিগরি ও ব্যবসায়িক পরামর্শসেবা দেওয়ার মাধ্যমে দেশীয় ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পগুলোকে রপ্তানি সক্ষম করে তোলা হবে।
এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সেন্টারগুলোতে থ্রি-ডি প্রিন্টিং ও ডিজাইন সেন্টার, টেস্টিং ও ক্যালিব্রেশন ল্যাব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন সেন্টার, টেকনোলজি ইনোভেশন ও ইনকিউবেশন সেন্টার, ওয়ার্কশপ, মেশিন-শপ, লাইব্রেরি ভবন, বিজনেস সেন্টার ইত্যাদি সুবিধা থাকবে।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা, বিভিন্ন ধরনের ডাই মোল্ডের দুষ্প্রাপ্যতা, পণ্যের ডিজাইন প্রণয়ন ও উদ্ভাবনী সক্ষমতার ঘাটতি, গুণগত মান, টেস্টিং ও সার্ভিসিং যোগানের অপর্যাপ্ততা ও দক্ষ শ্রমশক্তির ঘাটতি দূর করণের মাধ্যমে সেক্টরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে অন্যতম ভূমিকা পালন করবে এ টেকনোলজি সেন্টার।
প্রসঙ্গত, প্রকল্পের সাড়ে চারশত কোটি টাকার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ৩১৮ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ১৩২ কোটি টাকা ব্যয় করছে। অনুষ্ঠানে বেজার পক্ষ থেকে বাণিজ্য সচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লিখিত জমি হস্তান্তর করা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ইসিফোরজে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. ওবায়দুল আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেজার যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
জিসিজি/আরআইএস