ঢাকা: শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হলো কমিউনিস্ট নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক হায়দার আনোয়ার খান জুনোকে।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তাকে স্মরণ করে এক সভার আয়োজন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিস্ট বিপ্লবী হায়দার আনোয়ার খান জুনো নাগরিক শোকসভা জাতীয় কমিটি।
সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। একটি সঠিক তালিকা করে মুক্তিযোদ্ধাদের সত্যিকার সম্মান জানাতে হবে উল্লেখ করে মেনন বলেন, এখন আমাদের হিসেব করতে হয় তালিকায় কার নাম থাকবে আর কার নাম বাদ পড়বে। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। আমাদের এখন একটি সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ যদি আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হয়, তবে সত্যিকার অর্থেই আমাদের বামপন্থীদের একত্রিত হতে হবে। হায়দার আনোয়ার খান জুনো সবসময় তাই চাইতেন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেটিই চেয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধা হিসেবেও তিনি সম্মুখে থেকে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। অথচ তার স্বীকৃতি পেতেও কত সমস্যা। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা করে তাদের প্রতি সত্যিকারের সম্মান দিতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধে সবার অবদান ও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার ওপর জোর দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, হায়দার আনোয়ার খান জুনোর অবদান অনেকেই বুঝতে চান না। তিনি যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখসারিতে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তরুণ জুনো নেতৃত্ব দিয়ে নরসিংদী জেলা মুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, এটি সবার নৈতিক দায়িত্ব জুনোর অবদান যেন ভুলে না যাই। কেননা তারা দেশের মধ্যে থেকে দেশের মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সংগঠক হিসেবে দেশের মানুষকে একত্রিত করে যুদ্ধ করেছেন। তার অবদান জাতির ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
হায়দার আনোয়ার খান জুনোর বড় ভাই ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হায়দার আকবর খান রনো সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। তিনি বলেন, সম্পদের মোহতা কখনই জুনোকে স্পর্শ করতে পারেনি। জুনোর আদর্শ ছিল কমিউনিজম। দল ত্যাগ করলেও সমাজতান্ত্রিক আদর্শ কখনো সে ত্যাগ করেননি।
মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আপস করা উচিত নয় উল্লেখ করে সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসুর) সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা এখনো অনেকে স্বীকৃতি পাননি। হায়দার আনোয়ার খান জুনোর মতো একজন মানুষেরও দীর্ঘ ৫০ বছর সময় লেগেছে স্বীকৃতি পেতে। দেশে তো এমন আরও অনেক সধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধা আছে যারা এখনো স্বীকৃতি পাননি। তাদের কি অবস্থা ভাবতে কষ্ট হয়। এর ইতিহাসও বিকৃত করা হয়, যা জাতির জন্য লজ্জার। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞজনদের তুলে ধরার আহ্বান আমাদের।
হায়দার আনোয়ার খান জুনোর মেয়ে অনন্যা লাবণী বলেন, আমার বাবা তেমন মানুষ ছিলেন, যে মানুষের জীবন অন্য মানুষের জন্য আদর্শ ও পথ নির্দেশ হতে পারে। তিনি অত্যন্ত প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সবাইকে একত্রিত করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার জীবন-দর্শন আমাদের সামনে একটি উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের সহসভাপতি হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের নির্বাহী চেয়ারম্যান জসিম আহমেদ, মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
এইচএমএস/ আরকেআর/এমআরএ