ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাওরের নদী খনন প্রকল্পে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
হাওরের নদী খনন প্রকল্পে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ফাইল ফটো

ঢাকা: হাওরের নদীগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো খননের উদ্যোগ নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। এর ফলে রাজধানীর সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বাড়বে।

একইসঙ্গে হাওর এলাকায় বন্যার প্রবণতা কমবে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে, মাছ উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষি জমিতে সেচ কাজে তা সহায়ক হবে।  

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইাএস) এবং বিআইডব্লিউটিএর জরিপ শাখা ও প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত আন্তঃসংস্থা কারিগরি কমিটির সুপারিশের আলোকে হাওরের নদী খননের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম উপজেলার জনসাধারণ নৌপথে ভৈরব হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। এ অঞ্চলটি হাওর বেষ্টিত হওয়ায় নৌপথেই প্রতিদিন যাত্রীবাহী লঞ্চসহ মালামালবাহী অসংখ্য কার্গো জাগাজ চলাচল করে থাকে। এছাড়া স্থলপথে যোগাযোগ সীমিত হওয়ায় নৌপথই এলাকার অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম। নদী খননের ফলে হাওরের সঙ্গে নৌপথে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে বলে জানায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

‘মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদী, নামাকুড়া নদী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর অংশ বিশেষের নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।  

প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৩৫১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।  

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা) রফিক আহম্মদ সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, দেশে যেভাবে রেল ও সড়কপথের উন্নয়ন হয়েছে সেইভাবে নৌপথের উন্নয়ন হয়নি। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নৌপথ উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় হাওরের নদীগুলো খনন করা হবে। ফলে হাওরের সঙ্গে ঢাকার নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে কিছু নদী খনন করা হবে। ইতোমধেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে হাওরের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বাড়বে। হাওরে এটা দরকার। নদী খননের সঙ্গে ইকোলজিক্যাল বিষয় আছে।

প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদী, নামাকুড়া নদী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর অংশ বিশেষের খননের মাধ্যমে নৌপথ উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩০ লাখ ঘনমিটার মাটির ডাইক, ২৫টি নেভিগেশনাল এইডস সংগ্রহ, একটি জিপ, একটি ডাবল পিকআপ কেনা হবে। জরিপ কাজ, ফসলের ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে।

১০৭ লাখ ঘনমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩৬ লাখ ঘনমিটার সরকারি ড্রেজার ব্যবহার করা হবে বাকি কাজে বেসরকারি ড্রেজার ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও ৯১ লাখ ঘনমিটার মেইনটেইন্সে ড্রেজিং করা হবে। নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কিছু নদী খনন করা হবে।

বোলাই নদী খনন: মিঠামইন উপজেলার বাউলাই নদীর স্থানীয় নাম বোলাই। গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির প্রবাহ অনেকাংশে কমে যায় এবং নদীর তলদেশে পলি জমার কারণে চারিগ্রাম থেকে বরকান্দা অংশ পর্যন্ত প্রতি বছর শুকিয়ে যায়। নদীতে শুকনো মৌসুমে পানি না থাকার কারণে নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য চাষ এবং কৃষি কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীর গড় প্রশস্ততা ১২০ মিটার।

শ্রীগাং নদী খনন: মিঠামইন উপজেলার শ্রীগাং নদীর স্থানীয় নাম শিংগুড়ি। পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে শুকনো মৌসুমে এটি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। নদীর গতিপথ অধিকাংশই হাওর এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্ষাকালে পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে দুই পাশ প্লাবিত হয়ে যায়, তখন হাওর ও নদীর মধ্যে কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না। নদীর গড় প্রশস্ততা ৬০ মিটার।

ধনু নদী খনন: মিঠামইন উপজেলার ধনু নদীর স্থানীয় নাম ঘাড়াউতরা। বর্ষা মৌসুমে তীব্র স্রোতের কারণে মিঠামইন উপজেলার ভাঙন সৃষ্টি হয়। নদীটির খিদিরপুর মৌজা অংশের ঢাকা অংশে খননের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ লম্বালম্বিভাবে প্রবাহিত করা হলে মিঠামইন উপজেলার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। এই নদীর প্রবাহ ইটনা উপজেলার চৌগাংগা থেকে কুর্শি পর্যন্ত। পলি জমে ভরাট হওয়ার ফলে নদীর প্রশস্ততা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।

লামাখাড়া নদী খনন: ইটনা উপজেলার লামাখাড়া নদীর স্থানীয় নাম নামাকূড়া। নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ থাকে না। নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ চলাচল ব্যহত হচ্ছে।  

ধলেশ্বরী নদী খনন: নদীর অবস্থান অষ্টগ্রাম উপজেলায়। ধলেশ্বরী নদীতে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে শুকনো মৌসুমে নৌ চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দেওগড় ইউনিয়নের আলীনগর বাজার হতে বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নে মেঘনা নদীর মুখ পর্যন্ত অংশে পলি জমার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি।  

নৌপথগুলো ড্রেজিং করা হলে গভীরতা বাড়বে। ফলে সারাবছর নৌযান চলাচল, বন্যার প্রবণতা হ্রাস, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষি ও সেচ কাজে সহায়ক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।