পটুয়াখালী: “পরনের কাপড় নেই, স্ত্রীর ওড়না পরেন স্বামী” এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পরের দিন বুধবারও (৩০ ডিসেম্বর) সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পাচ্ছেন বৃদ্ধ ভিক্ষুক দম্পতি মো. সুলতান ও সকিনা বেগম।
সকালে পটুয়াখালী শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের প্রথম লেন বহালগাছিয়া এলাকায় মুন্সিবাড়ির সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মরহুম আব্দুল জব্বার মুন্সির বাড়িতে বৃদ্ধি দম্পতির কুটিরে এসব সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
দুপুরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শীলা দাসের নেতৃত্ব একটি দল বৃদ্ধ দম্পতির বসতঘরটি (আব্দুল জব্বার মুন্সির বাড়ির একটি ঘরে আশ্রিত) পরিদর্শন করেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাদের নগদ ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা দিতে যাবতীয় তথ্যাদি ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
এসময় সদর সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা, পটুয়াখালী ইয়ুথ ফোরামের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক রায়হান আহমেদ, বাংলানিউজের পটুয়াখালী ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মো. জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক সদর উপজেলা ও পৌরসভা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. সুলতান আহমেদ মৃধার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে একটি পাঞ্জাবি, একটি লুঙ্গি, একটি শাড়ি, নগদ এক হাজার টাকা, ২৫ কেজি চাল, পাঁচ কেজি আলু, তিন লিটার তেল, চার কেজি মসুর ডাল, তিন কেজি চিনি, দুই কেজি লবণ, দুই কেজি পেঁয়াজ ও রান্নার মশলা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি সরাসরি দম্পতির হাতে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এছাড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মৃধার পুত্রবধূ মিলা মৃধার পক্ষ থেকে লেপ ও তোষক, সৌরবিদ্যুৎ সেট ও সরকারি সেবা গ্রহণ এবং সবার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে একটি মোবাইল ফোন সেট ও সিম দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাংলানিউজের প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলানিউজের পটুয়াখালী ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মো. জহিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তির পাঠানো ২১ হাজার টাকা জমা হয়েছে। যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে আগামী শনিবার তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আরও পড়ুন:
পরনের কাপড় নেই, স্ত্রীর ওড়না পরেন স্বামী!
খাবার নিয়ে সেই বৃদ্ধ দম্পতির ঘরে ইউএনও
সহায়তা পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধ মো. সুলতান ডাক্তার ও তার স্ত্রী সকিনা বেগম দম্পতি। সুলতানের বয়স ৯৫ বছর ছাড়িয়েছে আর সকিনার বয়স ৭০ বছরের ঘরে। বৃদ্ধ এ দম্পতি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পটুয়াখালী শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ম লেন বোহালগাছিয়া এলাকায় থাকেন তারা। সদর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত পল্লী চিকিৎসক ইবরাহীম আকনের এক ছেলে মোছলেম। বাবা চিকিৎসক হওয়ায় তার মোসলেমের নামের পাশে জুড়ে যায় ডাক্তার শব্দটি। এরপর মোছলেম ডাক্তারের একমাত্র ছেলে সুলতানের নামও রাখা হয় সুলতান ডাক্তার। এক সময় মোছলেম ডাক্তার পাল তোলা নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তরুণ বয়সে গাড়ি চালিয়ে সংসার চালালেও এখন আর কিছু করতে পারেন না। মোস্তফা ও মোশাররফ নামে তাদের দুই ছেলে রয়েছেন, যারা এখন ঢাকায় রিকশা চালিয়ে নিজেরা কোনো রকম খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। বাবা-মাকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা করেন না তারা। ফলে বৃদ্ধ এ দম্পতিকে চলতে হয় ভিক্ষা করে। তবে সম্প্রতি সুলতান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার স্ত্রীর ভিক্ষার টাকায় চলে সংসার।
দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজে মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) "পরনে কাপড় নেই, স্ত্রীর ওড়না পরেন স্বামী" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর এ দম্পতির দুর্দশার বিষয়টি প্রশাসনসহ সব মহলের নজরে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রতি সহায়তা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
এসআই