ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদন

বন্ড সুবিধার আড়ালে কালোবাজারিতে ব্যস্ত ইউএস-বাংলা লেদার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
বন্ড সুবিধার আড়ালে কালোবাজারিতে ব্যস্ত ইউএস-বাংলা লেদার

শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানিতে বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার আড়ালে কালোবাজারিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউএস বাংলা গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলা লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড। এ তথ্য দিয়ে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্র বলেছে, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ভয়াবহ অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে ইউএস-বাংলা লেদার।

বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি নেই। তবুও বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি করছে। কালোবাজারিতে জড়িত থাকার অপরাধে ইউএস-বাংলা লেদারকে ইতিমধ্যে জরিমানা করা হয়েছে। ইউএস-বাংলা লেদারের শুল্ক ফাঁকি উদঘাটনে গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার শওকত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউএস-বাংলা লেদারের শুল্ক ফাঁকি উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আমরা যেখানেই বন্ড সুবিধার অপব্যবহার দেখব, সেখানেই কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।

তবে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাহের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। চামড়াশিল্প বাঁচাতে বন্ড সুবিধায় ফিনিশ লেদার আমদানি বন্ধ করতে হবে। কারণ, কালোবাজারি অব্যাহত থাকলে দেশের ট্যানারি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

কাস্টমস বন্ড সূত্র জানায়, সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত ইউএস-বাংলা গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলা লেদার প্রোডাক্টস বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহার করে বছরের পর বছর সরকারের কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির বন্ড লাইসেন্স নবায়ন করা হলেও ২০১৯ সালের পর গত দুই বছরে রহস্যজনকভাবে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অডিট হয়নি। ইউএস-বাংলা লেদার প্রোডাক্টসের দুটি ইউনিটের একটি বন্ধ রয়েছে। এই ইউনিটের অনিয়মের দায়ে সরকারের পাওনা ১৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৬ টাকা। আরেকটি ইউনিট সচল রয়েছে, সেখানেও অনিয়ম করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে সরকারের পাওনা ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।
সূত্র জানায়, ইউএস-বাংলা লেদার প্রোডাক্টস উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির নামে বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করলেও তার একটি অংশ রপ্তানি না করে সরকারের কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। বন্ড সুবিধায় আনা কাঁচামাল দিয়ে ইউএস-বাংলা গ্রুপের আরেক অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান ভাইব্রেন্ট ফুটওয়্যার লিমিটেডের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করে দেশীয় বাজারে বিক্রি করছে। যদিও দেশীয় বাজারে ভাইব্রেন্ট ফুটওয়্যার পরিচিত নাম নয়।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, ইউএস-বাংলা লেদার প্রোডাক্টস বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকান্ডও সন্দেহজনক বলে মনে করছে কাস্টমস। এর আগে ভাইব্রেন্ট জুতার শোরুম উদ্বোধন করে ২০১৮ সালে ইউএস-বাংলা গ্রুপ বলেছে, ভাইব্রেন্ট পণ্যের দামের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কম দামে জুতা উৎপাদনে বন্ড সুবিধার কাঁচামাল ব্যবহার করে দেশের বিকাশমান চামড়াশিল্পকে হুমকিতে ফেলেছে কিনা। প্রসঙ্গত, যেসব শিল্প খাত শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল এনে পণ্য তৈরি ও তা রপ্তানি করে, তাদের সরকার বন্ড সুবিধা দেয়। কিন্তু বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহারের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ- বন্ডারদের ওপর কাস্টমস ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকর নজরদারি নেই।

সৌজন্য: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।