সিলেট: সিলেটে সৎ মা ও ভাই-বোনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আহবাব হোসেন আবাদ (১৭)। ক্ষোভ ও ক্রোধ থেকে হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিলেটে মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নীলা ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আবাদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, তার বাবা ব্যবসায়ী আবদাল হোসেন বুলবুল দুই বিয়ে করেন। তার সৎ মায়ের কারণে তার মা ছিলেন বাবার কাছে উপেক্ষিত। এ জন্য সৎ মাকে মেনে নিতে পারেনি সে। যে কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা স্বরূপ গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার থেকে সিলেট শহরতলীর বিআইডিসি মীরমহল্লায় সৎ মায়ের বাসায় ওঠে। সেখানে বাবার সঙ্গে ব্যবসার দেখাশোনা করতো সে।
আদালতে সে আরও জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে সৎ মায়ের ঘরে ঢোকে দরজা বন্ধ করে ফেলে। এরপর ঘুমের মধ্যে ছুরা দিয়ে তাকে আঘাত করতে থাকে। তখন তার সৎ ভাই বোন ঘুম থেকে জেগে তাদের মাকে বাঁচাতে ঝাপিয়ে পড়ে এবং চিৎকার করতে থাকে। এরপর তাদেরকেও উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। এরপর খন্তি দিয়েও তাদের আঘাত করে। পরে ঘরের তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন আগুনের ধোঁয়া দেখে এগিয়ে আসেন। পরে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইবায়দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, মামলার আহবাব হোসেন আবাদ ছাড়াও তার মা সুলতানা বেগম রুমিকে আসামি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবাদ নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। শনিবার বিকাল ৪টায় তাকে অত্র আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় আড়াই ঘন্টা তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
আসামির জবানবন্দির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ক্ষোভ থেকেই সৎ মা ও তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছে আবাদ। হত্যাকাণ্ডের সময় তার সৎ ভাই-বোন ঘুম থেকে জেগে মাকে রক্ষার চেষ্টা করে। সেসময় তাদেরকেও ছুরা ও খুন্তি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে সে।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার বিআইডিসি মীরমহল্লায় ভাড়া বাসায় সৎ মা রুবিয়া বেগম (৩০), মেয়ে মাহা (৭) ও ছেলে তাহসানকে কুপিয়ে হত্যা করে আহবাব হোসেন আবাদ। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই রুবিয়া ও তার মেয়ে মাহার মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত শিশু তাহসানকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর বাসার কলাপসিবল গেইট বন্ধ থাকায় আবাদ পালিয়ে যেতে পারেনি। ওই সময় জনতা বাসাটি ঘেরাও করে রাখেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও সে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের হাটগ্রামের ফরমান আলীর মেয়ে রুবিয়া বেগম প্রায় ১০ বছর আগে বিআইডিসি মীরমহল্লায় বসবাসকারী বিয়ানীবাজারের অষ্টগ্রামের আবদাল হোসেন বুলবুলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অথচ প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন বুলবুল। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে শহরতলীর বিআইডিসি মীরমহল্লায় ভাড়া বাসায় রাখেন। প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ তেমন রাখতেন না তিনি। এরইমধ্যে অর্থাভাবে ছেলে আহবাব হোসেন পড়ালেখা বাদ দিয়েছেন। গত ৫ মাস আগে সে শহরতলীতে বাবার ব্যবসা দেখাশোনায় এসে যোগ দেয়। বিভিন্ন সময় সে সৎ মাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার বাবাকে ছেড়ে যেতে বলতো। সেই ক্ষোভ থেকে সৎ মা রুবিয়া ও তার ছেলে-মেয়েকে হত্যা করে আবাদ।
ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহতের ভাই আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে শাহপরান (র.) থানায় হত্যা ও প্ররোচনার দায়ে ৩০২ ও ১০৯ ধারায় মামলা (নং-১৮(২)২০২১) দায়ের করেন। মামলায় নিহতের সৎ ছেলে ‘ঘাতক’আহবাব হোসেন আবাদ ছাড়াও হত্যার প্ররোচনার দায়ে তার মা সুলতানা বেগম রুমিকেও আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১
এনইউ/ইউবি