ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্কুল খুলে দিলে সংক্রমণের হার বাড়তে পারে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১
স্কুল খুলে দিলে সংক্রমণের হার বাড়তে পারে

ঢাকা: মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় সরকারের সিদ্ধান্তে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সাধারণ মতামত দিলেও তারা মনে করেন, স্কুল খুলে দিলে সংক্রমণের হার বেড়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আর্থিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমান ভাবে প্রস্তুত নয়। স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী সুরক্ষা নিশ্চিত করার অতিরিক্ত ব্যয়ভার পূরণ করতে সরকারি অনুদানের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত “অবশেষে স্কুল খুলছে: আমরা কতখানি প্রস্তুত?” শীর্ষক সংলাপে প্রকাশিত অনলাইন জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য।

এক হাজার ৯৬০ জনের অংশগ্রহণে এ অনলাইন জরিপের ফলাফলে উঠে আসে, ৫৪ দশমিক সাত শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করছেন না। অন্যদিকে, ৬৮ শতাংশ শিক্ষক স্কুলে যেতে নিরাপদ বোধ করছেন বলে মতামত দেন। ৬৭ শতাংশ অভিভাবক সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে আগ্রহী নন এবং ৬৮ দশমিক আট শতাংশ শিক্ষক অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহনে সরকারি অনুদানের কথা উল্লেখ করেন। ৫০ দশমিক সাত শতাংশ অভিভাবক মনে করেন তাদের সন্তানের স্কুল, স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা মেনে চলতে সক্ষম না, যদিও ৬৮ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন তাদের স্কুলের স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা নিশ্চিত করার সামর্থ্য রয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী অন্যান্যদের মধ্যে ৬০ দশমিক পাঁচ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন স্কুল খোলা উচিত, যদিও ৫২ দশমকি দুই শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন এতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্কুল খোলার পরিস্থিতি নিয়ে একটি মিশ্র চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন স্কুল খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার প্রস্তুতি সমান নয়। স্কুল বন্ধ থাকায় তথ্যপ্রযুক্তির অভিগম্যতায় বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের প্রস্তুতিতে পার্থক্যের পাশাপাশি শহর ও গ্রামের স্কুলের মধ্যেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার ওপরেও জোর দেন তিনি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সরকারি পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় বাড়ানোর পরামর্শ দেন ড. দেবপ্রিয়।  

প্রারম্ভিক বক্তা এডুকেশন ওয়াচের মীখয গবেষক ড. মঞ্জুর আহমেদ বলেন, সব বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে, শুধু কিছু মৌলিক বিষয়ে জোর দিয়ে স্কুল খোলা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কম পড়বে।

বিশেষ অতিথি গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের শুধু স্কুলে নয় বরং সামগ্রিকভাবে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এক্ষেত্রে সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক মনে করেন, স্বাস্থ্য-নির্দেশিকাগুলো বিশদ এবং স্কুলের ভেতর সব নিয়মাবলী মেনে চলা কঠিন হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ একই মত প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল খোলা যেতে পারে।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মোট ১৬টি জেলা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাবক এ সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন এ সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, নেতারা এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১
এসই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।