বরগুনা: বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঢলুয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো. বাদল মিয়া (৫৭)। তিনি কোনো দিন ঢাকা যাননি।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। একই সঙ্গে অহেতুক কারাবাসের জন্য রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর ডাক যোগে ঢাকার শিশু আদালতের পাঠানো বাদল মিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা আসে বরগুনার পুলিশ কার্যালয়ে। গ্রহণ করার পর এ গ্রেফতারি পরোয়ানা বরগুনার আদালতে পাঠায় পুলিশ। এরপর সেখান থেকে পাঠানো হয় বরগুনা সদর থানায়। এরপর গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বাদলকে গ্রেফতার করেন বরগুনা থানায় কর্মরত এএসআই নাঈমুর। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর টানা ৩৫ দিন কারাবাসের পর গত ১৮ জানুয়ারি জামিনসহ মামলা থেকে বাদলকে অব্যাহতি দেন আদালত।
জামিনের পাশাপাশি মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত উল্লেখ করেন, যে গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে বাদলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে মামলা নম্বর লেখা হয়েছে জি.আর ৪২৫/১৭ ও শিশু ৮৯০/১৮ (ঢাকা)। এছাড়াও মামলা দায়েরের সাল ২০১৭ হলেও গ্রেফতারি পরোয়ানার বিচারকের স্বাক্ষর এর স্থলে তারিখ দেওয়া হয়েছে ৪ এপ্রিল ২০১৪।
অন্যদিকে বাদলকে গ্রেফতারের পর সেই তথ্য ডাকযোগে ঢাকা জজ আদালতের শিশু আদালতে পাঠানো হলেও এ নামের কোনো আদালত নেই বলে চিঠিটি ফেরত আসে। এছাড়াও বাদল গ্রেফতারি পরোয়ানায় উল্লেখ থাকা নম্বরে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই বলেও নিশ্চিত হয় বরগুনার আদালত। তাই বাদলকে জামিনের পাশাপাশি এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাদল অভিযোগ করেন, শুধুমাত্র টাকার জন্য ভুয়া একটি গ্রেফতারি পরোয়ানায় পুলিশের সোর্স সাইফুল ও ইলিয়াস বরগুনা থানায় কর্মরত এএসআই নাঈমুর ও সাইফুলের সাহায্যে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ঘৃণ্য অপরাধের মিথ্যা অভিযোগের অস্তিত্ববিহীন মামলায় ৩৫ দিন কারাভোগ করিয়েছেন। তাই আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে বাদল ছেলে রাকিব বলেন, গ্রেফতারের পর আমার বাবার জামিন আবেদনের জন্য ওয়ারেন্টের কপি নিয়ে আমি ঢাকা যাই মামলার কাগজপত্র তোলার জন্য। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও গ্রেফতারি পরোয়ানায় উল্লেখিত আদালত আমি ঢাকার জজ কোর্টে পাইনি। ঢাকার জজ কোর্টে নয়টি নারী ও শিশু আদালত রয়েছে। প্রতিটি আদালতে ওয়ারেন্টে উল্লেখিত মামলা নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করে জানতে পারি- এরকম কোনো মামলা ওইসব আদালতে বিচারাধীন নেই। তখন আমি নিশ্চিত হই- আমার বাবাকে ভুয়া এবং ভৌতিক একটি গ্রেফতারি পরোয়ানায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা থানায় কর্মরত এএসআই নাঈমুর রহমান বলেন, বাদলের গ্রেফতারি পরোয়ানা বরগুনা থানায় এসেছে ২০১৮ সালে। তখন আমি পিরোজপুরে কর্মরত ছিলাম। আমি বরগুনা থানায় যোগদান করেছি গত বছরের ৬ নভেম্বর। সে হিসেবে আমি যোগদান করার দুই বছর আগেই বরগুনা থানায় বাদল মিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা আসে। তাই আদালতের আদেশ অনুযায়ী বাদল কে গ্রেফতার করে আমি আইনানুগ প্রক্রিয়া অবলম্বন করি।
তিনি বলেন, বাদল গ্রামের একজন মানুষ। তিনি বা তার পরিবারের কারও সঙ্গেই আমার কোনো রকম পরিচয় কিংবা যোগাযোগ ছিল না। শুধুমাত্র গ্রেফতারের জন্যই তাকে আমি খুঁজেছি। এখানে আমার কোনো দোষ নেই। তিনি অহেতুক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
এ বিষয়ে এএসআই মো. সাইফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলা পুলিশের সোর্স সাইফুল ও ইলিয়াসকে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম তরিকুল ইসলাম বলেন, অন্যসব গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের মতই বাদলকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এখানে পুলিশের কোনো দোষ নেই। কেন না সব ক্ষেত্রে গ্রেফতারি পরোয়ানার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয় না পুলিশের।
তিনি বলেন, যে বা যারা পুলিশের সঙ্গে প্রতারণা করে একজন নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি করেছে তাদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি। আমার বিশ্বাস- খুব শিগগিরই তাদের আমরা আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
আরআইএস