ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

একটি সেতুর অভাবে ১৫ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
একটি সেতুর অভাবে ১৫ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি

মেহেরপুর: মাত্র একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মেহেরপুরের সদর ও গাংনী উপজেলার ১৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। কোনো মতে বাঁশের সেতুর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন তারা।

দীর্ঘদিন ধরে একটি ব্রিজের দাবি জানিয়ে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দফতরের অফিসে ধর্না দিয়েও কোনো সুফল পাননি ভুক্তভোগীরা।

ভৈরব নদের গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া বাঁশের সেতটিু দিয়ে দুটি উপজেলার (সদর ও গাংনী) ১৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন। সেতুটির পশ্চিম পাশের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষকে নিত্যদিন কৃষিপণ্য বিপণন, চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যেতে হয় পূর্ব দিকের গাড়াবাড়িয়া গ্রামে। পূর্ব দিকেরও ৫টি গ্রামের মানুষকে নানা কাজে যাতায়াত করতে হয় নদীর অপর দিকের গ্রামগুলোতে।

প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয়রাই বাঁশ ও খুঁটি দিয়ে সেতু তৈরি করে কোনো রকমে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। শত বছরের খেয়া ঘাট দিয়ে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও আজও সুনজর পড়েনি এলজিইডি কর্তৃপক্ষের। ফলে দুটি উপজেলার (সদর ও গাংনী) মানুষের সেতুবন্ধন অধরাই রয়ে গেছে।

হিতিমপাড়া গ্রামের স্কুলছাত্রী সাহানারা, আনজুয়ারা ও রিমিন জানায়, গত বছর ভারি বর্ষণে বাঁশের সেতুটি পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। তখন আমাদের কষ্টের সীমা ছিলো না। আমাদের এই এলাকার শতাধিক ছাত্র ছাত্রী গাড়াবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের ওই সেতু পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক সামসুল হক ও দিদকর হোসেন জানান, সরকারের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এলাকার মানুষের প্রচেষ্টায় নিজেরাই বাঁশ সংগ্রহ করে সেতুটি তৈরি করেছি। ঠিকমত সংস্কার না হওয়ায় দীর্ঘ বাঁশের সেতুটি এখন দুর্বল কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে। অতি প্রয়োজনের সময় ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয় সেতুটি। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা এলাকাবাসীর।

কুতুবপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আক্তারুজ্জামান লাভলু বলেন, মেহেরপুর শহর থেকে উত্তরাঞ্চলের সেতুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সেতু হচ্ছে গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া সেতু। ভৈরব নদী খননের পর ওই সেতুর আশপাশে কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চারটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া সেতুটি আজও নির্মাণ করা হয়নি। এলজিইডি থেকে বার বার আশ্বাস দিলেও সেতুটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি কেউ।

স্থানীয় কৃষক জাব্বার হোসেন, ব্যবসায়ী আমানতুল্লাহ ও সাখাওয়াত হোসেন জানান, বর্ষার সময় সেতুটি ডুবে গেলে অনেক দূরের রাস্তা কাথুলী সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তাতে খরচও বেশি হয়। নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ে কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান রানা জানান, শত বছরের পুরাতন এই খেয়া ঘাটটিতে আজও একটি সেতু নির্মাণ করা হয়নি। সেতুটি নির্মাণ হলে দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। শিগগিরই সেতুটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

মেহেরপুরের এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া সেতু নির্মাণে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তবে ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় তা ফিরে এসেছে। আবারও সংশোধন করে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি সেতু নির্মাণের। সেতুটি নির্মিত হলে শিক্ষার পাশাপাশি অর্থনেতিক উন্নয়ন ও লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ কমবে বলে জানান স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।