নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার করতে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। হামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ তার পরিবারের পাঁচ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

সোমবার (৮ মার্চ) রাতে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বড়ালুপাড়াগাঁও ও চনপাড়া বড়বাড়ি এলাকায় এ ঘটে ঘটনা। এ সময় সন্ত্রাসীরা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৩৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।  

এদিকে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বড়ালুপাড়াগাঁও এলাকায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসী।

আহত আশরাফুল আলম জেমিন জানান, তিনি চনপাড়া বড়বাড়ি গ্রামের মৃত নুরুল আলমের ছেলে। এছাড়া কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহেদ আলী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর তার বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সোমবার (৮ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাহেদ আলী ও বহিরাগত কামরুজ্জামান হীরার নেতৃত্বে শমসের ডাকাত, স্বপন, শাওন, নাজমা বেগম, লিটন, মিল্লাত, ফারুক ভুইয়া, রাসেলসহ ২০ থেকে ২৫ জনের একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী রামদা, চাপাতি, পিস্তলসহ সশস্ত্র অবস্থায় এলাকায় মহড়া দিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পরে আশরাফুল আলম জেমিনের বাড়ির গেইটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে জেমিনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এ সময় আশরাফুলের মা রাশিদা বেগম ও বড় ভাবি রিয়া আক্তার, ভাতিজি আফিফা, বড় ভাই আহাম্মদ হাসান সৈকত এগিয়ে এলে তাদের এলোপাথারি ভাবে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা ঘরে থাকা নগদ আট লাখ টাকা, ২৪ ভরি স্বর্ণালংকার, দুটি এলইডি টেলিভিশন, একটি এসি, একটি মোটরসাইকেলসহ প্রায়  ৩৫ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়।

 অপর ঘটনায় মহিউদ্দিন মিয়া জানান, তিনি কায়েতপাড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি। তিনিসহ ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি জামান বেপারীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাহেদ আলীর অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে আসছেন। আর এর জের ধরে রাত ১১টার দিকে পাড়াগাঁও বাজারে অবস্থিত তাদের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রতিপক্ষ জাহেদ আলী ও  কামরুজ্জামান হীরার নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় কার্যালয়ে থাকা কাঁচের গ্লাস, চেয়ার-টেবিল ও এসি ভাঙচুর করে। এছাড়া নগদ চার লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ মালপত্র লুটে নেয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
 
এদিকে হামলা- ভাঙচুর-লুটপাট ও আহতের ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বড়ালুপাড়াগাঁও এলাকায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসী।  

প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বাশার টুকু, কার্যকরী সদস্য করিম পাঠান, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন সহ-সভাপতি হাজি ইয়ার হোসেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম চৌধুরী অপু প্রমুখ।
 
এ সময় কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল বলেন, জাহেদ আলী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এলাকায় এনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর ও ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আলম জেমিনের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আহতের ঘটনা ঘটানো ন্যক্কারজনক। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড কোনো ভাবেই কায়েতপাড়াবাসী মেনে নেবে না।
 
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাহেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
 
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বাংলানিউজকে বলেন, পৃথক ঘটনায় দুটি অভিযোগ পেয়েছি। একটি মামলা হয়েছে, অপরটি মামলার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২১
আরআইএস