ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিদ্ধিরগঞ্জে মাদরাসাছাত্র হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৭

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
সিদ্ধিরগঞ্জে মাদরাসাছাত্র হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৭

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার একটি মাদরাসায় ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে, ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে বলে পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার অভিযোগে তার বন্ধু ও মাদরাসার শিক্ষকসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১২ মার্চ) নিহতের ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে সিদ্ধারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

পরে পুলিশ দুপুরে রসুলবাগ মাঝিপাড়ার রওজাতুল উলুম মাদরাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।  

এরপর গ্রেফতারকৃতদের সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়।  

নিহত মাদরাসাছাত্রের নাম সাব্বির হোসেন (১৪)। সে রূপগঞ্জ উপজেরার শান্তিনগর এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে ও রওজাতুল উলুম মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।

গ্রেফতারকৃতরা হরেন-মাদরাসার শিক্ষক শওকত হোসেন সুমন (২৬), জোবায়ের আহম্মেদ (২৬) ও আব্দুল আজিজ (৪২)। বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় গ্রেপতারকৃত বাকি চার সহপাঠীর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এ এস এম শাহীন বলেন, ১০ মার্চ সকাল ১১টার দিকে মাদরাসার শিক্ষক জোবায়ের নিহতের পরিবারকে জানান, সাব্বির মাদরাসার ছাদে ওঠার সিড়ির পাশে ফাঁকা রডের সঙ্গে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে, তার লাশ নিয়ে যান। পরে স্বজনরা পুলিশে কোনো অভিযোগ না দিয়ে মাদরাসা থেকে মরদেহ নিয়ে রূপগঞ্জে নিজ এলাকায় দাফন করেন। কিন্তু দাফনের আগে গোসলের সময় নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তারা। এজন্য নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে মাদরাসার তিন শিক্ষক ও নিহতের সহপাঠী চার বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে মারধর করে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়েছে। কবর থেকে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্তে করা হবে। ময়নাতদন্তের পরই বলা যাবে, এটা হত্যা না আত্মহত্যা। তিন শিক্ষকের সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আর চার বন্ধুকে কিশোর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

নিহত সাব্বির হোসেনের বাবা জামাল হোসেন বলেন, ১০ মার্চ সকাল সোয়া ৯টায় আমার ছেলে মাদরাসার শিক্ষক জোবাইয়েরের মোবাইল থেকে তার মাকে কল দেয়। ওই সময় সে সুস্থ ছিল। তার মাকে বিভিন্ন বিষয়ে বলেছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফোন দিয়ে ওর মাকে শিক্ষক জোবায়ের বলেন যে সাব্বির আত্মহত্যা করেছে, দ্রুত মাদরাসায় আসেন।

তিনি বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত মাদরাসায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমাদের সন্তানের মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। তার আগে (মাদরাসার শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি) আমাদের একটি আলাদা রুমে নিয়ে বসিয়ে বলেন, আগে কথা শোনেন, পরে লাশ পাবেন। তখন তারা বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি। তোমরা যদি নিজের ছেলের লাশ নিয়ে যেতে চাও এবং নিজেরা ফাঁসতে না চাও, তাহলে তোমরা একে গোপনে নিয়ে যাও, আর গোপনে আলাদাভাবে মাটি দিয়ে দাও। এমন কোনো কিছু করবা না, যাতে এ মাদরাসার ক্ষতি বা বদনাম হয়। এ কথা বলায় আমি ও আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে যাই। এরপর তাদের কথায় রাজি হই যে কোনো অভিযোগ করবো না, তখন লাশ দেয়।

তিনি আরও বলেন, লাশ এনে বাড়িতে গোসল করানোর সময় আমরা, মহল্লাবাসীসহ সবাই দেখতে পাই, সাব্বিরের মাথায়, চোখের ওপরে কপালে, ঠোঁটে ও দাড়ির নিচে, গলায় আঘাতের চিহ্ন। আর পায়ে মারধরের চিহ্ন। শরীরটা থেতলানো। তখন সবাই বলতে থাকে যে এটা আত্মহত্যা না, তাকে হত্যা করেছে। আমার ছেলেকে পিটিয়ে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

রওজাতুল উলুম মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন। তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে এক নারী নিজেকে তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি এখন ঘুমিয়ে আছেন। এখন ডাকা যাবে না। এটা বলে ফোন রেখে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।