ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটেও বেড়েছে মশা, ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা! 

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
সিলেটেও বেড়েছে মশা, ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা!  মশা

সিলেট: মহামারি করোনায় কাবু মানুষ। অকালে প্রাণ ঝরছে অনেকের।

এমন পরিস্থিতিতে মশার আগ্রাসনে দুশ্চিন্তার বলিরেখা নগরবাসীর কপালে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মশার উপদ্রব। অ্যারোসোল, কয়েল-মশা তাড়াতে বিষাক্ত সব উপকরণই ব্যর্থ। আর মশা নিধনে এখনই পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু ভয়াবহতা বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরাও।  

শীতের বিদায় ঘণ্টা বাজার পর গরমে বাসা-বাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-সবখানেই রক্তচোষা ক্ষুদ্র এই প্রাণীটির দাপট। ফলে দৈনন্দিন জীবনে খরচার তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিষাক্ত মশার কয়েল ও স্প্রে। মশা থেকে নিস্তার পেতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি ভেবেও কয়েল-স্প্রে ব্যবহার হচ্ছে ঘরে ঘরে। তারপরও মশার উপদ্রব ঠেকানো যাচ্ছে না।  নগরবাসীর অভিযোগ, ড্রেন ও নালায় জমে থাকা ময়লা আবর্জনার কারণে বর্তমানে মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সিলেট নগর। দীর্ঘদিন ধরে মশার ওষুধ না ছিটানোর কারণে মশার উপদ্রব ক্রমশ বাড়ছে। দিনদুপুরে মশার কামড় থেকে নিস্তার মিলছে না। এ কারণে নগরবাসীর অনেকে সিসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকাণ্ড নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, মশার প্রজনন ধ্বংসে ছিটানো ওষুধের মান নিয়েও।

নাম প্রকাশ না করে নগরের বাসিন্দা এক নারী বলেন, কয়েল জ্বালিয়ে, অ্যারোসোল স্প্রে করে ব্যর্থ হয়ে নাস্তা-খাবার খেতে বসেন মশারি টানিয়ে। বাসার দরজা-জানালায়ও টানিয়েছেন মশারি। এটা প্রতিবাদ স্বরূপ নয়, নিজেদের সুরক্ষায় করেছেন, বলেন ওই নারী।  

নগরের মিরের ময়দানের বাসিন্দা সুমন আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। যে কারণে মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বেশকিছুদিন আগে ওষুধ ছিটালেও মশা কমেনি। ফেলে ওষুধের মান নিয়ে সন্দেহ হয়। সিসিক সূত্র জানায়, মশার ওষুধ কিনতে প্রতি বছর বাজেট বাড়ালেও মশার যন্ত্রণা কমাতে পারেনি সিলেট সিটি করপোরেশন। এবারও লার্ভি সাইজের ৫ হাজার ও এডাল্টি সাইজের মশা নিধনে ১০ হাজার লিটার ওষুধ কেনা হচ্ছে। তবে মশা নিধনে সিসিকের ৭০টি ফগার মেশিন (ধোঁয়া দেওয়ার যন্ত্র) থাকলেও ৪৬টি-ই নষ্ট অবস্থায় রয়েছে।

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বাংলানিউজকে বলেন, মার্চের দিকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সময়। এসময় এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি পায়। মশা নিধনে এবং এডিসের লার্ভা ধ্বংসে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কেননা, সিলেট নগরে এডিস মশার উপস্থিতি অত্যাধিক। আর বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগ এক নম্বরে, দ্বিতীয়ত চিকনগুনিয়া। এ দু’টি রোগ এডিস মশা দ্বারা বিস্তৃত হয়। করোনাকালে যদি ডেঙ্গুরোগ ছড়িয়ে পড়ে, তবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, সিসিক এলাকায় ড্রেনের ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজের ফলে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হয়ে পানি জমে থাকে। বড় বড় নির্মাণের স্থলে পানি জমে আছে কি-না, তাও সিসিক খতিয়ে দেখছে না। অথচ সেসব স্থানের জমে থাকা পানি থেকে এডিস মশার বংশ বাড়তে পারে। এসব বিষয়ে ঠিাকাদারদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয় না।  

সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, মশার ওষুধ ৫ হাজার লিটার লার্ভি ও ১০ হাজার লিটার এডাল্টি সাইজ মশার ওষুধ কেনা হচ্ছে। মশা নিধনে আউটসোর্সিংয়ে দেড় শতাধিক লোকজনমশা নিধনে কাজ করবেন। এডাল্টি (বড়মশা) নিধনে কাজ করবে ১০ জন এবং ৪০ জন লার্ভি সাইজ মশা নিধনে কাজ করবেন। প্রতি ওয়ার্ডে সাতদিনের ৫দিন লার্ভি ও ৩দিন করে এডাল্টি মশা নিধনে কাজ করা হবে।

ওষুধে মশা না মরার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ওষুধে মশা মরে না, কথাটা ঠিক না। ড্রেনগুলোতে আবর্জনার কারণে ওষুধ ছিটিয়েও মশার বংশবিস্তার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে প্রয়োজন ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা। কারণ ওয়ার্ডগুলোতে ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। তাতে মশার ব্যাপকতার অন্যতম কারণ। তবে এটার দায় কেবল সিসিকের নয়, জনগণেও।

সিসিকের পরিচ্ছন্ন কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ বাংলানিউজকে বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে ময়লা ফেলার পর্যাপ্ত ডাম্পিং ব্যবস্থা নেই। মানুষ রাস্তাঘাটে, ড্রেনে ময়লা ফেলে। এ নিয়ে পরিষদেও আলোচনা হয়েছে। ড্রেন-নর্দমা পরিষ্কা করার পর মশার ওষুধ ছিটিয়েও মশা কমছে না। যে কারণে ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। অবশ্য পরিচ্ছন্নতায় ১৫০ জন লেবার নামানো হবে।  বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর শওকত আমিন তৌহিদকে মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অবশ্য মশা নিধনে আশার বানী শোনালেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আবর্জনা রেখে কোটি টাকার ওষুধ ছিটালেও কাজ হবে না। পরিস্কার অভিযান চলবে, অন্যদিকে মশার ওষুধ ছিটানো হবে। সোমবার (১৫ মার্চ) থেকে পুরোদমে নালা নদর্মা পরিষ্কার কাজ ও ওষুধ ছিটানো শুরু হবে। একসঙ্গে ৫/৬টি টিম কাজ করবে। বড় মশা মারতে প্রত্যহ বিকেলে এবং ছোট মশা মারতে দিনে স্প্রে করা হবে।

তাছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রত্যেকে নিজ বাসা-বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, যারা অবহেলা করবেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের জরিমানা করবেন। প্রবাসীরা যারা রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া বাড়ি ফেলে রেখেছেন। তারাও এই আওতার বাইরে নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।