ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারী পাচারের অভিযোগ জাকিরের বিরুদ্ধে

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারী পাচারের অভিযোগ জাকিরের বিরুদ্ধে জাকির হোসেন

সাভার (ঢাকা): মানুষ একজন কিন্তু পরিচিতি অনেক নামে। কখনো ফয়সাল, অঙ্গন অথবা শুভ নামে নিজেকে পরিচয় দেন তিনি।

তাকে এক এক জায়গায় এক এক নামে চেনেন অনেকেই। বিয়ের কথা বলে নারীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে পরে তাদের কৌশলে বিভিন্ন যৌনপল্লিতে পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া মাদকসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তিনি।  

জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম জাকির হোসেন। নির্ধারিত কোনো পেশা নেই জাকিরের। ক্ষণে ক্ষণেই অবস্থান পরিবর্তন করেন। বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার চেংঠী হাজার ডাংগা ইউনিয়নের আদর ডাংগা গ্রামে। নারী পাচার, ফিটিং, মাদক বিক্রি ও ছিনতাই-ডাকাতিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকায় বাড়িতেও থাকতে পারেন না জাকির। তাই কখনো আশুলিয়ার জামগড়ায়, কখনো বা চট্টগ্রামে আবার কখনো পাবনায় থাকের তিনি।  

তার প্রধান কাজ শিল্প অঞ্চল আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় কাজের সন্ধানে আসা নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে নিজের বশে রাখা। এক সময় বিয়ের কথা বলে তাদের বিভিন্ন যৌনপল্লিতে ৭০ থেকে লাখ টাকায়ও বিক্রি করেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেই নারীদের সঙ্গে জাকির শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে তাদের জিম্মি করতেন। সেসব ভিডিও নানা বয়সের পুরুষদের দেখিয়ে আকৃষ্ট করে বাসায় এনে ‘ফিটিং’ বাণিজ্যও করেন জাকির। আর কোনো পুরুষ তার ফাঁদে পড়ে অনৈতিক কাজের জন্য বাসায় এলে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন মোটা অংকের টাকাসহ মোবাইল ফোন, ঘড়ি ইত্যাদি। যদি জাকিরের এমন অপকর্মে তার সংশ্লিষ্ট ‘প্রেমিকা’ রাজি না হন, তাহলে তার আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন তিনি। তাতেও কাজ না হলে মেয়েদের করা হয় মারধর। শুধু তাই নয়, জাকির তার স্ত্রীকেও এসব অপকর্ম করতে বাধ্য করতেন। এমনটাই দাবি করছেন তার তৃতীয় স্ত্রী তামান্না আক্তার (ছদ্ম নাম)।  

তিনি তার স্বামী জাকিরের হাত থেকে বাঁচতে তার বিরুদ্ধে ১৮ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, আমাদের বিয়ে ছয় বছরের। ফারিয়া নামে একটি কন্যা সন্তানও আছে। গত তিন মাস ধরে আমার সঙ্গে জাকিরের কোনো যোগাযোগ নেই। জাকির মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। আমাকে যে কোনো সময় পাচার করে দিতে পারে।  

তামান্না বাংলানিউজকে জানান, পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় আশুলিয়ায় চাকরির খোঁজে আসেন তিনি। সেখানে পরিচয় হয় জাকিরের সঙ্গে। প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে কয়য়েকবার জাকিরের বাড়ি পঞ্চগড়ের বাড়িতে গেছেন তিনি। কিন্তু কিছু দিন পর জাকির তাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ফরিদপুরের একটি যৌনপল্লিতে নিয়ে বিক্রি করে দেন। পরে জাকিরের বাবা-মা জোর করে তামান্নাকে যৌনপল্লি থেকে নিয়ে এসে জাকিরের সঙ্গে বিয়ে দেন। এর কয়েক বছর পর তাদের ঘরে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু জাকির তার কাজ করতেই থাকেন, মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি করতে থাকেন। এছাড়া তামান্নাকে দিয়ে ২০টিরও বেশি ‘ফিটিং’ করান। এসবে তামান্না রাজি না হলে তাকে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোনো মতো প্রাণে বেঁচে ফিরে আসেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে এতো অপকর্ম চালানো জাকির হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য। কোনোভাবেই তাকে ঠেকানো যাচ্ছে না। এতোসব বিষয়ের পর বাকি নারীদের বাঁচাতে ও নিজে বাঁচতে থানার দ্বারস্থ হন তামান্না আক্তার।  

তামান্না বলেন, আমি বেশ কয়েকজন নারী পাচার করার সাক্ষী। শুধু তাই নয়, আমাকে দিয়ে ফিটিং করাতো মানুষদের। আমি যদি না করতাম, আমাকে মারধর করতো। আমি বর্তমানে তার কথা না শোনায়, সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি জাকিরের হাত থেকে বাঁচতে চাই। জাকিরকে না থামাতে পারলে অনেক নারীর জীবন নষ্ট হবে। আমি জানি আমিও দোষী, কিন্তু আমি আর পাপ করতে চাই না। শাস্তি হলে আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু জাকিরকে অপকর্মের শাস্তি পেতে হবে। আমি অনেকবার জাকিরকে ভালো করতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। সে উল্টো আমাকে বিক্রি করে দিতে গিয়েছিল। জাকির বর্তমানে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে পাবনায় অবস্থান করছে। সেই মেয়েটিকেও সে বিক্রির চেষ্টা করছে।  

জাকিরের এ স্ত্রীর দাবি, তার স্বামী এ পর্যন্ত ৫৫টি মেয়েকে বিভিন্ন পতিতালে বিক্রি করেছেন। তার নামে ১০-১২টি মামলাও রয়েছে।  

জাকিরের যত অপর্কম তার কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভুক্তোভোগীদের এক অংশের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে বাংলানিউজ। জাকিরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: 

ফিটিংবাজি:

জাকির বিভিন্ন সময় তার স্ত্রী তামান্নাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে রায়হানসহ ২০-২৫ জনকে তাদের জালে ফেলে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন জাকির। সম্মানের ভয়ে ভুক্তোভোগীরা কারো কাছে মুখ খুলতে পারেন না।  

রায়হান নামে এক ব্যক্তিকে ২০২০ সালের জুলাই মাসের দিকে স্বামী জাকিরের নির্দেশে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জামগড়ার বাসায় ডেকে আনেন তামান্না। তারপর জাকিরসহ কয়েকজন তাকে ধরে তার মোটরসাইকেল রেখে দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে থানায় স্বামীর পক্ষ নিয়ে একটি অভিযোগ করেন তামান্না। রায়হান তার বাইকটি নিয়ে যেতে পারলেও গাড়ির কাগজপত্র নিতে পারেননি।  

এছাড়া আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ ও বাইপাইল এলাকার তিন ব্যক্তিকে একইভাবে ডেকে এনে নগদ টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেন।  

ভুক্তোভোগী রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, আসলে করোনার শুরুর দিকে ঢাকায় আসার সময় জাকিরের স্ত্রীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি আমার এলাকার মেয়ে, এর জন্য প্রায়ই কথা হতো। এছাড়া আমার শ্বশুর বাড়িও আশুলিয়ায়। তাই বিভিন্ন সময় সেই মেয়েকে আমি সাহায্য করতাম। কয়েক মাস আগে মেয়েটি আমাকে ডেকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এমন সময় আমাকে কয়েকটা ছেলে ধরে ফোন, টাকা ও মোটরসাইকেল রেখে দেয়। পরে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে পারলেও কাগজপত্র রয়ে যায় তাদের কাছে। এ ঘটনার কয়েকদিন পর অবশ্য মেয়েটি আমাকে বলেছে, এখানে তার কোনো দোষ ছিল না। সে আসলে তার স্বামী জাকিরের চাপে পড়ে এসব করেছে।  

নারী পাচার: 

গত ১০ বছরে জাকির দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, দৌলতদিয়া ও ময়মনসিংহসহ আরও কয়েকটি যৌনপল্লিতে ৫০টিরও বেশি নারীকে বিক্রি করেছেন বলে দাবি তার স্ত্রীর তামান্নার। সম্প্রতি রত্না (ছদ্ম) নামে এক নারী স্বামী-সন্তানের কাছ থেকে সম্পর্কের ইতি টেনে নীলফামারী জেলা থেকে প্রেমের টানে ছুটে আসেন জাকিরের কাছে। ওই মেয়েকে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন জাকির। পরে রত্নার স্বামী বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন।  

এ বিষয়ে রত্নার স্বামী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পরিবারে একটি সন্তান আছে। সেই সন্তান রেখে আমার স্ত্রী চলে গেছে কয়েক মাস আগে। সঙ্গে আমার জমানো টাকা ও বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ করেছি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে এখন আর কথা হয় না। সে কোথায় আছে, তা জানি না।  

জাকিরের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন থাকা তারই এক প্রতিবেশী রফিকুল (ছদ্ম নাম) বাংলানিউজকে বলেন, রত্নাকে যখন বিক্রি করে দেয়, তখন আমিও সঙ্গে ছিলাম। কিছুদিন পর আমার অন্যায় বুঝতে পেরে আবার রত্নাকে যৌনপল্লি থেকে আমিই বের করে নিয়ে এসেছি। এরপর থেকে জাকিরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ। এখন আমি জাকিরের সঙ্গে নেই। কারণ জাকিরের এমন অপকর্ম আমার ভালো লাগে না। আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম, ভালো কাজ করতে, কিন্তু জাকির আমাকে নিয়ে এসব কাজ করাতো। তাই আমি আবার এলাকায় চলে আসছি। আমার জানা মতে কয়েকজন নারীকে জাকির বিক্রি করেছে।  

এ বিষয়ে আরও গভীরভাবে জানতে জাকিরের গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগ করা হয়। পরে জাকিরের আরেক প্রতিবেশী নাহিদ (ছদ্ম নাম) বাংলানিউজকে বলেন, জাকির নানা সময় নানা অপকর্ম করে ঢাকা থেকে গা ঢাকা দিতে বাড়িতে আসেন। তিনি যে ক’বারই বাড়িতে আসতেন, তার সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মেয়ে আসতেন। আমরা জিজ্ঞেস করলে, তারা নিজেদের জাকিরের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতেন। একটা সময় জাকির মেয়েদের নিয়ে ব্যবসা করেন ও তাদের বিক্রি করে দেন-এ কথা এলাকায় জানাজানি হওয়ায় জাকির আর এলাকায় আসেন না।  

অভিযোগ উঠেছে, জাকির সারা দেশের বিভিন্ন স্থানের যৌনপল্লিতে নারীদের বিক্রি করে থাকেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ যৌনপল্লির সর্দারনির সঙ্গে কথা বলে নারীদের বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, জাকিরের সঙ্গে আমাদের অনেক আগে থেকেই পরিচয়। জাকির আমাকে বিভিন্ন সময় মেয়ে এনে দেন। জাকির একটু বাটপার টাইপের। তাকে বিশ্বাস করতে নেই। আমাকে পাঁচ-সাতটি মেয়ে এনে দিয়েছেন তিনি।  

মাদক ব্যবসা: 

চাকরির খোঁজে আশুলিয়ায় এসে জাকিরের সঙ্গে প্রায় ছয় মাস থেকেছেন তার এলাকার এক যুবক। জাকিরের এসব অপকর্মের সঙ্গে টিকতে না পেরে পরে তিনি বাড়িতে চলে যান। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাকিরের নামে এলাকায় বহু ইতিহাস রয়েছে। তার বাবা-মা মারা গেছেন। এলাকায় তার কিছুই নেই। ছোটবেলা থেকেই জাকির ঢাকায় থাকেন। জাকির গাড়িসহ নানা জিনিস চুরি করেন, যাকে তাকে বাসায় ডেকে হেনস্তা করেন।  

জাকিরের তৃতীয় স্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, জাকির মাঝে মধ্যে আমাকে দিয়েও মাদক বিক্রি করাতো। এছাড়া তার একটি গ্যাং আছে, যারা শুধু মাদকের সঙ্গেই জড়িত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মাদক নিয়ে এসে সে বিক্রি করাতো।  

ছিনতাই-ডাকাতি:

জাকির একটি আন্তঃজেলার বাস, মোটরসাইকলে ও পিকআপ ভ্যান ছিনতাই করেছেন। এ নিয়ে মামলাও রয়েছে জাকিরের নামে। গত দুই বছর আগে জাকির ঢাকা থেকে বাসা ছেড়ে মালপত্র একটি পিকআপ ভ্যানে নিয়ে বাড়ি দেবীগঞ্জ যাচ্ছিলেন। দেবীগঞ্জের কাছাকাছি গিয়ে পিকআপ ভ্যানটির চালক ও হেলপারকে মারধর করে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গাড়িটি নিয়ে পালানোর সময় হাতে নাতে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন জাকির। পরে তাকে থানায় দেওয়া হয়। জেলহাজতেও থাকতে হয় তাকে।  

জাকিরের সৎ ভাই আব্দুস সামাদ, তার স্ত্রীকে সহয়তা করায় তাকেও গত ২০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি আব্দুস সামেদের মায়ের। এ বিষয়ে জাকিরের সৎ মা শাহারা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, জাকির আমাকে ফোন করেছিল। সে বলেছে আমার ছেলে নাকি জেলে আছে। কিন্তু জাকির আমার ছেলের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দেয় না। আমার ছেলে কোথায় আছে, কি করছে, কিছুই জানি না। আমার ছেলেটা রাজ মিস্ত্রির কাজ করে। আব্দুস সামাদ ছাড়া আর কেউ নেই আমার। আমি আমার ছেলে খোঁজে যে থানায় যাব, সে সাধ্যও আমার নেই।  

এতোসব অপর্কমের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তার দু’টি ফোন নম্বরে কয়েকবার কল দিলে তাকে পাওয়া যায়নি।  

জাকিরের জন্মস্থান অর্থাৎ চেংঠী হাজার ডাংগা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জাকির আমাদের এলাকায় তেমন থাকতেন না। ঢাকায় বেশি থাকেন। তবে তার নামে নানা কেলেঙ্কারি রয়েছে। তিনি ছেলে হিসেবেও ভালো না। এলাকায় থাকলে একটা না একটা অপকর্ম করতেনই। এর জন্য বর্তমানে এলাকার লোকজনও তাকে এলাকায় আসতে দেন না।  

এক বছর আগে একটি ছিনতাই মামলার অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন দেবিগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুজন দেবনাথ। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আসলে জাকিরের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, তা ঢাকার দিকেই হয়েছে। সে মামলাগুলোর একটি অনুসন্ধানের ভার আমার ওপরে পড়েছিল। পরে আমি তার বাড়িতে গিয়ে অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এছাড়া জাকিরের নামে দেবিগঞ্জ থানায় কোনো মামলা নেই।
  
এতো সব অপরাধ করার পরেও জাকির প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার ইমাম হাসান ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল হওয়ার কারণে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা থেকে জীবিকার সন্ধানে লাখ লাখ মানুষ এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। জাকিরের মতো অনেক কুখ্যাত অপরাধীর আবাসস্থল হয়ে উঠেছে এ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া। অত্যধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ার কারণে স্থানীয় থানার অল্পসংখ্যক পুলিশের মাধ্যমে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। জাকিরের মতো লোক যদি দিনের আলোতে ঘুরে বেড়ান, তাহলে জানমালের নিরাপত্তা বিধান অসম্ভব হয়ে পড়বে।  

তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলের অপরাধী এবং অপরাধের প্রকার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ার কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সন্ত্রাসীরা এ এলাকায় বিশেষ করে মাদক সেবন ও বিক্রি, নারী-শিশু পাচার, ডাকাতির মতো  গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনকি অপরাধীরা অন্য জেলার বাসিন্দা হওয়ার কারণে অপরাধ সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গেই অবস্থান পরিবর্তন করতে পারছেন। এ কারণে অপ্রতুল পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হচ্ছে না। জাকিরের মতো কোনো অপরাধীর আমলনামা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পৌঁছানো মাত্রই তাদের বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশের সহায়তা নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়তে থাকবে।  

জাকিরের যেসব মামলা চলমান আছে, সেসব মামলায় তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা উচিত বলে মনে করেন এ আইনজীবী।  

তিনি বলেন, প্রয়োজনে তার স্থায়ী ঠিকানায় জেলা পুলিশের সহায়তা নেওয়া দরকার। সারা বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ জীবিকার তাগিদে এ অঞ্চলে বসবাস করছেন।  তাদের জানমালের নিরাপত্তার লক্ষ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।