ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সড়কে ভয়ঙ্কর 'আশুলিয়া ক্লাসিক'

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২১
সড়কে ভয়ঙ্কর 'আশুলিয়া ক্লাসিক'

সাভার (ঢাকা): দুই লেনের টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক। এই সড়কে প্রায় মহাসড়কের মতই গাড়ির চাপ থাকে।

সড়কটি পোশাক শিল্প এলাকা আশুলিয়ার বুকের ওপর দিয়ে যাওয়ায় ছোটো-বড়, বৈধ-অবৈধ সব পরিবহনই চলে।

এ সড়কে পথচারী ও যাত্রীদের কাছে ভয়ের ও আতঙ্কের নাম ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ পরিবহন। এই পরিবহনগুলো সড়কে রেসিং কারের মত প্রতিযোগিতা নিয়ে চালকেরা করে। দেখলে মনে হবে হলিউডের সিনেমা ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াসের কোনো এক পর্ব দেখানো হচ্ছে।

বাসে যাত্রী তোলা থেকে শুরু করে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া পর্যন্ত নানাভাবে হয়রানি করে কন্টাক্টর ও হেলপাররা। এছাড়া একই কোম্পানির দুই বাসের রেষারেষির কারণে অনেকেরই প্রাণ যাচ্ছে এবং সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছেন কেউ কেউ।

আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহনের বাসগুলো নবীনগর থেকে ছেড়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাত্রী বহন করে। আশুলিয়া ক্লাসিকের মত একই পথের অনুসারী পরিবহন আলিফ ও কিরণ মালা নামের আরও দুটি বাস। অল্প বয়সের চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে বাসগুলো সড়কে মানুষ খেকো হয়ে উঠেছে।  

সম্প্রতি গত বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) আশুলিয়ার নরসিংহপুরে আশুলিয়া ক্লাসিক (ঢাকা মেট্রো-ব- ১৩০১৮০) নামে বাসের চাপায় শারমিন গ্রুপ নামে একটি পোশাক কারখানার প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা শামসুল আলম নিহত হন। এ নিয়ে কারখানাটির শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ও আশুলিয়া ক্লাসিকের ব্যানারে চলা তিনটি বাসে আগুনসহ প্রায় ২০টি পরিবহন ভাঙচুর  করে।

এ ঘটনার একদিন পর সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পায়। যেখানে দেখা গেছে দুই বাসের রেষারেষির কারণে মাঝখানে পড়ে পিষ্ট হয়ে মারা যান শামসুল। এ নিয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে নিহতের স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে বাস সংশ্লিষ্ট সবাই গা ঢাকা দিয়েছে।
আশুলিয়া ক্লাসিক বাসের নানা অপর্কমের ইতিহাস রয়েছে। বাসের ভেতর নারী শ্রমিককে দলবেধে ধর্ষণের চেষ্টা। চালক ও হেলপার কন্ট্রাক্টর দ্বারা যাত্রীদের জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রেয়েছে। যত্রতত্র বিপদজনক ওভার টেকিংসহ যেখানে সেখানে বাসে যাত্রী উঠানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।

সাভারের আশুলিয়ার সড়কগুলো দিয়ে সব সময় মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন সাভার বাইক রাইডার্স গ্রুপের সদস্য রিয়াজ। তিনি সড়কে চলার পথে নানাভাবে আশুলিয়া ক্লাসিক বাসের হয়রানির শিকার হয়েছেন।  

রিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সড়কে বাইক চালাই। অনেক পরিবহন তো দেখি কিন্তু আশুলিয়া ক্লাসিকের মত না। এই বাসগুলোর চালকরা এমনভাবে চলাচল করে যেনো তাদের জন্য শুধু সড়ক বানানো হয়েছে। শুধু তাই নয় এই বাসগুলোর অনেক চালক কিশোর। কিছু না বুঝেই উল্টা-পাল্টাভাবে পাল্লা দেয়।

নরসিংহপুর এলাকার রিশাদ মণ্ডল নামে এক পথচারী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিনিয়ত বাসগুলো দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আর কত প্রাণ গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়কে চলাচলের সময় আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। সবসময় আতঙ্কে থাকি কখন কি হয়ে যায়।

বেলায়েত হোসেন মেহেদী নামে এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, আশুলিয়া ক্লাসিক, মহনা, আলিফসহ এই এলাকায় যতগুলো পরিবহন রয়েছে, এদের এই ওভার টেকিং এর কারণে প্রতিনিয়ত পোশাক শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে। অতি দ্রুত বাসগুলোকে একটি নিয়মের মধ্যে ফেলা হোক। এবং এই নিয়ম সব সময়ের জন্য বহাল রাখতে হবে।  

বাইপাইল ত্রিমোড়ের পাশে দোকান আরিফ মাহমুদের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই বাসগুলো পুরো রাস্তায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে, গতকালও ওদের তাণ্ডব স্বচক্ষে দেখেছে অনেকেই। বাইপাইল মোড়ে যানজটের জন্য ওরাই অনেকাংশে দায়ী। সবসময় এই জায়গা দখল করে রাখে তারা।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই নিজের মত প্রকাশ করে এই পরিবহনের বাস বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

আশুলিয়া ক্লাসিকের প্রায় ৩০০টি পরিবহন সড়কে চলে। এখানে এক ব্যানরে প্রায় অর্ধশত মালিক। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বাসের মালিক আশরাফ। এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের যুব বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে দুর্ঘটনার মূল করণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চালকের অদক্ষতা ও প্রতিযোগিতা। যেকোনো পরিবহনের প্রতিযোগিতার মনোভাব যদি বন্ধ না করা হয় তবে সেই সড়কে কেউ নিরাপদ নয়। এখানে আমরা কোনো পরিবহনকে এককভাবে বলবো না। সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে অনেক পরিবহন আছে যারা আইন- শৃঙ্খলা মানে না। শুধু এখানে চালকদেরও দোষ না। পরিবহনের মালিকদেরও দোষ রয়েছে। মালিকরা চালকদের টার্গেট দিয়ে প্রতিযোগিতার একটি মনোভাব সৃষ্টি করে দেয়। পরে সড়কে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেই কথা চালকের আর খেয়াল থাকে না। সে শুধু ভাবে কি করে বেশি ট্রিপ মারা যাবে। এ বিষয়ে পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট আছে তাদের কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।