ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শখের এভারগ্রিন বার্ড পার্ক এখন প্রথম শ্রেণির ব্রিডিং ফার্ম

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
শখের এভারগ্রিন বার্ড পার্ক এখন প্রথম শ্রেণির ব্রিডিং ফার্ম

বাগেরহাট: এভারগ্রিন রিসোর্ট অ্যান্ড বার্ড পার্ক। শখের বসে গড়ে তোলা এই পার্কটি এখন দেশের প্রথম শ্রেণির পাখি প্রজনন খামারে রূপ নিয়েছে।

মো. ফজলুর রহমানের শখের এই পাখি খামার সৌখিন পাখি প্রেমীদের কাছে আদর্শ পাখি খামার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

দেশের সৌখিন পাখি প্রেমিদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি এই খামারের মাধ্যমে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেন খামার খামার মালিক ফজলুর রহমান। বাগেরহাট সদর উপজেলার উৎকুল গ্রামে ২০১৩ সালে প্রায় ৫০ একর জমির উপর ব্যবসায়ী ফজলুল কিরমের ‘এভারগ্রিন রিসোর্ট অ্যান্ড বার্ড পার্ক’।

বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন ছোট পিচঢালা রাস্তা দিয়ে আধা কিলোমিটার ভিতরে গেলে হাতের ডান পাশে বিশাল আকৃতির গেট। গেটের গায়ে লেখা ‘এভারগ্রিন রিসোর্ট অ্যান্ড বার্ড পার্কের উন্নয়ন কাজ চলছে, প্রবেশ নিষেধ’। এই লেখা উপেক্ষা করে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে সবুজ টিন দেওয়া বিশাল আকৃতির সেড। সেডের মধ্যে রয়েছে মন জুড়ানো নানা রং ও আকৃতির দেশি-বিদেশি পাখি।  

বছর তিনেক আগে শুরু করা এই খামারে সালফার কাকাতুয়া, ম্যাকাও, আমেরিকান নিকোবার পিজিয়ন, সান কুনুর, গালা কাকা তুয়া, অ্যামাজন, সিজেন্ট, পিলেক্টাস, পিংবেলিট, লুটিনো আলেকজান্ডার, রিং মেন্ট, ময়ূর, সাদা ময়ূর, ইগলসহ পার্কটিতে দেশি-বিদেশি ৩০ প্রজাতির ৫ শতাধিক পাখি রয়েছে। এসব পাখির ডাক, রং, ওড়ার ভঙ্গি সবকিছুই নজর কাড়ার মতো। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার কথাও বলে মানুষের মতো। সবকিছুতেই রয়েছে এক অদ্ভুত আকর্ষণ। এই পার্কে প্রবেশ করলে যেকোনো মানুষের কয়েক ঘণ্টা কেটে যাবে পাখি দেখে।  

তবে এখন পর্যন্ত পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। এ বছরের শেষ দিকে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পার্কটিতে ভ্রমণ করতে পারবেন সাধারণ মানুষরা। তারপরও পরিচিত মানুষের অনুরোধে কিছু দর্শণার্থীদের পার্কে প্রবেশ করতে দেন দায়িত্বরতরা। পাখি দেখে খুশি হন তারা।
পাখি দেখতে আসা খুলনার ব্যবসায়ী গোলাম রহমান বিটু বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে এতো পাখি এক সঙ্গে কোনদিন দেখিনি। ভবিষ্যতেও দেখব বলে জানিনা। এখানের পাখি দেখে আমি সত্যিই অভিভূত হয়েছি।

পার্কটিতে পাখিদের দেখাশোনা, খাবার দেওয়া ও পরিচর্যার জন্য রয়েছেন আলাদা আলাদা ব্যক্তি। কঠোর নিরাপত্তা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে পাখিগুলোকে আগলে রাখা হয় ফার্মের খাচায়। শখের এই পাখিদের খাবারের তালিকায় রয়েছে সূর্যমুখীর বীজ, কুসুম ফুল, বিভিন্ন প্রকার বাদাম, আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, গম ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফলের বিভিন্ন বীজ।
 
পাখির পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা হাসান গাজী বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন প্রকার বীজ, শীতকালীন সবজি ও ওয়াল নাট, আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, গম ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফলের বিভিন্ন বীজ আমরা পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও প্রতিটি প্রজাতির পাখির জন্য আলাদা যত্নও করতে হয় আমাদের।

হাসান গাজী আরও বলেন, আমরা মূলত এই পার্কে বাচ্চা উৎপাদন করছি। মোটামুটি বিভিন্ন বিরল প্রজাতির ৭-৮ প্রজাতির পাখির বাচ্চা চলে আসছে। দুর্লভ প্রজাতির কিছু পাখিও বাচ্চা দিয়েছে আমাদের ফার্মে। যেমন বেটার সালফাল কাকাতুয়া, ফিজেন্টের বাচ্চা, সাদা ময়ুরের (এলবেনি) বাচ্চা চলে আসছে। দুর্লভ ও আকর্ষণীয় পাখিদের বাচ্চা উৎপাদনের জন্য আমাদের নানা রকম পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। পাখিদের ডিম ফোটাবার যত্ন আমাদের নিজেদের তৈরি ইনকিউবেটরও রয়েছে। অনেক পাখি আছে যাদের বাচ্চা ফোটার পরে মা-বাবার কাছে রাখা যায় না। এদের কয়েকদিন বিশেষ যত্নে রাখতে হয়। আমার রুমে রাখি এসব বাচ্চাদের।
পার্কের ব্যবস্থাপক তরুণ বাবু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পার্কটি বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম শ্রেণির একটি বার্ড পার্ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখনও আমরা উদ্বোধন করতে পারিনি। তারপরও পাখি প্রেমীদের মধ্যে অনেক সাড়া পড়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন মানুষের অনুরোধে কিছু দর্শণার্থীদের প্রবেশ করতে দিতে হয় আমাদের পার্কে। তারা পাখি দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। অনেকে আবার ক্রয়েরও প্রস্তাব দেন। তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা খুব দ্রুত উদ্বোধন করব। তখন পাখি প্রেমীদের পছন্দের জায়গায় পরিণত হবে এভারগ্রিন রিসোর্ট অ্যান্ড বার্ড পার্ক।  

পার্কের মালিক ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বলেন, শখের বসেই আমি এখানে পাখি লালন পালন শুরু করি। শখ থেকেই মানুষ অনেক বড় হতে পারে। শখের গোল্ড ফিস চাষ করে অনেক মানুষ কোটি টাকারও বাণিজ্য করছে। আমার এই পার্কটিও এমন হবে। আমার পার্কে পাখিরা বাচ্চা দেওয়া শুরু করেছে। আমি এখনও পাখি বিক্রি শুরু করিনি। তারপরও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আমার এখানের পাখি ক্রয়ের প্রস্তাব দেয়। আমার পার্কটি অনেক বড় নিজের চাহিদা মিটিয়ে দেশের মধ্যে এবং বিদেশেও পাখি বিক্রির আশা করেন তিনি।

ফজলুর রহমান আরও বলেন, পাখির সঙ্গে অনেক বড় একটা বাণিজ্য জড়িত রয়েছে। পাখি পালনের জন্য ওষুধ, খাবার, পানি, পাখির ঘরসহ বিভিন্ন প্রকার সরঞ্জামের প্রয়োজন রয়েছে। এসব প্রতিটি জিনিসের জন্য আলাদা আলাদা উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ রয়েছে। অনেক কাজ রয়েছে যেসব কাজে বিনোদন রয়েছে। পাখি পালন এমন একটি বিষয় যেখানে বিনোদনের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ের সুযোগ রয়েছে। সবাইকে চাকরির পেছনে না ছুটে একেক জনকে এক এক সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।  

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফার রহমান বলেন, এভারগ্রিন রিসোর্ট অ্যান্ড বার্ড পার্কে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে। ন্যাচারাল পরিবেশেই তাদের লালন পালন করা হয়। পার্কের লালন পালন করা পাখিগুলোকে সঠিক যত্ন করা হয়। এভাবে লালন-পালন করতে পারলে এই পাখি দিয়ে অনেক বড় ব্যবসা করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।