ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন খুলনার সরকারি কর্মকর্তারা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২১
দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন খুলনার সরকারি কর্মকর্তারা

খুলনা: বেতন প্রায় দ্বিগুণ করা হলেও ঘুষ-দুর্নীতি অনিয়ম আর হয়রানির শেষ নেই খুলনার সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিশেষ করে ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটার ভূমি অফিসে ঘুষ গ্রহণ ওপেন সিক্রেট।

এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি নেই। সম্প্রতি সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতির অভিযোগে যত ব্যক্তির নামে মামলা বা গ্রেফতার করেছে তারা প্রায় সবাই সরকারি কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানীতে জানা যায়, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) তৈমুর ইসলামের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) দুদক খুলনার উপ-পরিচালক মো. শাওন মিয়া এ মামলার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তৈমুর ইসলাম তার চাকরি জীবনে ৭৭ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৬ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। যা তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ২০০২ সালে ডিএমপিতে চাকরি করার সময় সাময়িক বরখাস্ত হন এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে চাকরি ফিরে পান। এসময় তিনি অ্যাপার্টমেন্ট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট নামক কোম্পানিতে চাকরি করেন। ২০১৫-১৬ সালে তিনি নিজ স্ত্রীকে ৬৫ লাখ টাকা দান করেন। টুটপাড়া এলাকায় ৩৭ শতক জমির ওপর চারতলা বাড়ি নির্মাণ করে বাবার দান হিসাবে দেখিয়েছেন। অথচ তার মূল্য পরিশোধ করেছেন তৈমুর। ডুমুরিয়ায় ৬২ শতক জমিতে একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সম্পদ বিবরণীতে ১২ লাখ টাকা ব্যয় দেখালেও আয়কর নথিতে ২০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। ২০১১ সালে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি গাড়ি কিনেন। যা রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয়ের অর্থ আয়কর নথিতে দেখাননি। ফলে এটিও অবৈধ আয়।  

অন্যদিকে ২০১১-১২ সালে দুবার থাইল্যান্ড ভ্রমণে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। এসব খরচের হিসাবও তিনি আয়কর নথিতে দেখাননি। এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনের কারণে মানিলন্ডারিং আইনের ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এছাড়া বৃহস্পতিবার খুলনার ডুমুরিয়ায় ঘুষের টাকাসহ হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর মো. আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে দুদক।

জানা যায়, ডুমুরিয়ার উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ডা. রনজিত কুমার নন্দীর ডিজি ফান্ডের টাকা উত্তোলন করা জন্য ঘুষের দাবি করেছিলেন হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর মো. আলমগীর হোসেন। বিষয়টি দুদকে অবগত করেন ডা. রনজিত কুমার নন্দী। বৃহস্পতিবার ঘুষের টাকা নেওয়ার সময় মো. আলমগীর হোসেনকে হাতেনাতে দুদক আটক করে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে প্রস্তুতি চলছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাস। নগরীর বেনীবাবু রোডে তার বহুতল ভবন। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, আছে অঢেল অর্থ-সম্পদ। দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ঠিকাদাররা।

নড়াইলে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনের সময় তাপসী দাসের নামে সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। সম্প্রতি তাকে গোপালগঞ্জে বদলির আদেশ এসেছে।

দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে খুলনা উন্নয়ন সংস্থার (কেডিএ) অথরাইজড মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। চীন থেকে ৪৫ লাখ টাকার ইউটিএম মেশিন ৭০ লাখ টাকা ক্রয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটসহ বিপুল অর্থ সম্পদের খোঁজ মিলেছে তারও। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করে দুদক।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রধান যুবায়ের হোসেন। ক্ষমতার অপব্যবহার, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অজর্নের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।

অভিযোগ রয়েছে, ভূমি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, ওয়াসা, কাস্টমস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ , সিভিল সার্জনের কার্যালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেকেই ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করছেন না। ভুক্তভোগীরা নীরবে ঘুষ দিয়েই কাজ হাসিল করে নিচ্ছেন। আর যারা কাঙ্ক্ষিত ঘুষ দিতে পারছেন না তাদের কাজও হচ্ছে না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) খুলনার সভাপতি এ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শিলু বাংলানিউজকে বলেন, দুদক অভিযান চালালেও থামছে না ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়ম। স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না থাকায় দুর্নীতির ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হয়েছে সরকারি অফিসগুলো। তবে, কিছু সৎ কর্মকর্তাও রয়েছে যারা ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়ান না। দুদককে আরও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সেসঙ্গে সরকারি অফিসগুলোতেও স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা আরও বাড়াতে হবে।

দুদকের সমন্বিত খুলনা জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযোগ আসলে তা খতিয়ে দেখিয়ে মামলা করা হয়।  গ্রেফতারও করা হয়। করোনার কারণে অভিযানে একটু ভাটা পড়েছিলো এখন তা আবার জোরদার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।