ঢাকা: মার্চ মাস আসলেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মাইকে বাজান। স্কুলের সামনে ঘুরে-ঘুরে মাইক বাজান শুধু মাত্র বঙ্গবন্ধুকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টায়।
বুধবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় অদ্ভুত এক বাহন চালিয়ে প্রথমবারের মতো ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর থেকে রাজধানীতে এসেছেন আশরাফুল।
বাহনটি দূর থেকে দেখলে মনে হবে চার চাকার একটি নৌকা। সামনে গেলেই ভুল ভাঙে সবার। একটি মোটরসাইকেলের মাঝে বসানো হয়েছে নৌকার ফ্রেম। নৌকার ফ্রেমের মাঝে দাঁড়া করানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য। আর দুপাশে বসানো আছে দুটি মাইক। বোতাম চাপলেই নড়াচড়া করে সেই ভাস্কর্য। আর মাইকে বাজতে থাকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাওয়া গান ও বিভিন্ন ধরনের দেশাত্মবোধক গান।
বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) রাতে রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলীতে অদ্ভূত সেই বাহনের মালিক মো. আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা হয় বাংলানিউজের।
কি কারণে পথ থেকে পথে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মাইকে বাজিয়ে ঘুরে বেড়ান জানতে চাইলে আশরাফুল বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দিতে আমার এই ভিন্নধর্মী চেষ্টা। যখনই দৃষ্টিনন্দন কিছু করব তখনই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারব। তখনই কাছে আসবে আর আমার নেতার ভাষণ শুনবে মানুষ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে এই বাহন বানিয়েছি। ছোটবেলায় বাবার মুখে নেতার কথা শুনেছি। নেতার ঋণ তো আমরা কখনো শোধ করতে পারব না। তাকে মনে রাখতেও নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে আমার এই চেষ্টা।
মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কবে থেকে বাজিয়ে আসছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে প্রথম ভ্যানগাড়িতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দাড়া করিয়ে ও মাইকে ভাষণ বাজিয়ে স্কুলের সামনে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শোনাতাম। কিন্তু তখন কেউ শুনতে চাইত না। কাছে আসতো না। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আরও দৃষ্টিনন্দন কিছু করার চেষ্টা করতে থাকি। এক বছরের চেষ্টা করে মোটরসাইকেলের মাঝে নৌকার ফ্রেম বসিয়ে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করি। বাহনটি আমি একাই তৈরি করে করেছি। যতবার পর্যন্ত সঠিকভাবে মন মতো হয়নি ততবার ভেঙেছি আর তৈরি করেছি। আমি নিজে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির সঠিক আকৃতি দিতে দিনের পর দিন চেষ্টা করেছি। ২০১৯ সাল থেকে আমি ১ মার্চ তারিখ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত জেলা শহরের স্কুল গুলোতে ঘুরে বেড়াই আর মাইকে বাজাই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। বাহনটি তৈরির পর থেকে মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর পছন্দের প্রতীক ছিল নৌকা। তাই এ প্রতীকে অনুসরণে তৈরি করা হয়েছে বাহনটি। এখন যেখানে যাই সেখানেই মানুষ ভিড় লাগিয়ে দেয় বাহনটি দেখার জন্য। বাহনটি তৈরি করতে আমার সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। বিগত বছরগুলোতে আমি আমার জেলার আশপাশের জেলা শহরগুলোতে বাহনটি নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছি। প্রথমবারের মতো এবার ঢাকা শহরে ঘুরে বেরিয়েছি। শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নবীনগর স্মৃতিসৌধ এলাকায় থাকবো। পরে সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ ফিরে যাব।
ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি একজন কৃষি ব্যবসায়ী। আমার নিজের কোনো চাষের জমি নেই। আমি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ করি। আমি সবজি চাষ করে থাকি। এছাড়াও ছাগল ও গরু পালি। এক ছেলে ও মেয়ের জনক মেম্বার মো. আশরাফুল ইসলাম।
অদ্ভুত বাহনটির তৈরি করা হয়, একটি নৌকার ফ্রেমের মাঝে বসানো হয়েছে ১০০ সিসি ডিসকভারি মোটরসাইকেল। ফ্রেমের পেছনে যুক্ত করা হয়েছে অতিরিক্ত দুটি চাকা, দুটি লাইট, মাঝখানে আছে দুটি মাইক ও দুটি ব্যাটারি। ভাস্কর্যটি নড়াচড়া করানোর জন্য রয়েছে দুটি বাটন বা সুইচ। নৌকার পেছনে আছে বাংলাদেশের সাত বীরশ্রেষ্ঠের নাম ও ছবি। বাহনটির সামনে রাখা হয়েছে দেশের জাতীয় পতাকা। নৌকাটির সামনের অংশে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। প্রধানমন্ত্রীর ছবি দুপাশে আছে জাতীয় চার নেতার ছবি। বাহনটির দু'পাশের বাহুতে শোভা পাচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা হওয়া বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ১৬ সদস্যের ছবি। নৌকার ফ্রেমটি সাজানো হয়েছে প্লাস্টিকের কৃত্রিম ফুল দিয়ে। নৌকার ঢাকনার মাঝখানে দাঁড়া করানো আছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটিকে পড়ানো হয়েছে সাদা পাঞ্জাবী-পায়জামা, কাল মুজিব কোট ও কালো ফ্রেমের চশমা। নৌকার দুই পাশের বাহুতে লেখা আছে, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। মুজিব বর্ষ সফল হোক।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
এমএমআই/এমএমএস