ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে মারধর, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২১
ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে মারধর, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি

বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খাসেরহাট বাজার ইজারার দরপত্র জমা দেওয়ায় গৌতম কুমার বিশ্বাস (২৯) নামে এক যুবককে মারধর এবং উপজেলা চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়ালকে গালিগালাজ ও হুমকি দিয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওহিদুজ্জামান খলিফা। এ ঘটনায় চিতলমারী উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে।

মারধরের ঘটনায় মামলা না হলেও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বুধবার (৩১ মার্চ) রাতে চিতলমারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল।

এদিকে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়ালকে গালিগালাজ ও জীবন নাশের হুমকির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যানের কক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন এক সভা করেছেন। সভায় জনপ্রতিনিধিরা এই ঘটনার তিব্র নিন্দা জানান এবং ওহিদুজ্জামানের শাস্তির দাবি করেন। এসময় চিতলমারী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান স্বপ্না আক্তারসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত গৌতম কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, রনজিত কুমার বাড়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় আমি তার পক্ষে উপজেলা পরিষদে দরপত্রটি জমা দিতে আসি। যথারীতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে রাখা টেন্ডার বাক্সে দরপত্র ফেলি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওহিদুজ্জামান খলিফা ও তার ভাই মাসুদ খলিফা এবং সুকুমার ঘটক আমাকে উপজেলা চত্বরে বসে মারধর করে। আমাকে মারধর করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে কোদালের আছাড়ি ও বরফ ভাঙা মুগুর দিয়ে আমাকে আবারও পিটায়। এক পর্যায়ে আমাকে আওয়ামী লীগের অফিসে ফেলে রেখে তারা চলে যায়। পরবর্তীকালে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল বাংলানিউজকে বলেন, দরপত্র জমা দেওয়ায় পরিষদের বারান্দা থেকে ধরে নিয়ে গৌতম কুমার বিশ্বাস নামে এক যুবককে বেধড়ক মারধর করেছে ওহিদুজ্জামান খলিফা ও তার লোকেরা। পরবর্তীকালে ওহিদুজ্জামান আমাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গালিগালাজ শুরু করে।  

এসময় সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন প্রতিবাদ করলে তাকেও গালিগালাজ করে ওহিদুজ্জামান। এ ঘটনায় আমি চিতলমারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। পুলিশই পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওহিদুজ্জামান খলিফা বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাসেরহাট বাজারের দরপত্রটি স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করে নেওয়ার কথা ছিল। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছিলাম। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের ইন্ধনে গৌতম কুমার বিশ্বাস দরপত্র জমা দিয়ে দেয়। এ কারণে আমি গৌতম বিশ্বাসকে দুটি চড় দিয়েছি, এর বেশিকিছু ঘটেনি।

এদিকে দরপত্র সমঝোতার বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিজুষ কান্তি রায় বাংলানিউজকে বলেন, টেন্ডার সমঝোতার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যে কথা বলা হয়েছে তা সত্য নয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী টেন্ডার সমঝোতার সঙ্গে জড়িত নয়। আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করতে এসব কথা বলা হচ্ছে। একটি হাট-বাজারের দরপত্র নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরা তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমার কার্যালয়ের মধ্যে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা চত্বরে একটি মারধরের খবর শুনেছি। আমি থানা পুলিশকে জানিয়েছে। তাদের বলা হয়েছে কেউ আইনগত সহায়তা চাইলে সঠিক তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এছাড়াও সার্বিক ঘটনা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।

বুধবার (৩১ মার্চ) দুপুরে চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঠিকাদার রনজিত কুমার বাড়ইয়ের পক্ষে খাসেরহাট বাজার ইজারার দরপত্র জমা জমা দেয় গৌতম কুমার বিশ্বাস। এসময় উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে থেকে মারতে মারতে উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে নিয়ে যায় ওহিদুজ্জামান খলিফা ও তার লোকজন। সেখানে আরেক দফায় গৌতমকে বেধড়ক মারধর করে ফেলে রেখে আবারও উপজেলা পরিষদের সামনে এসে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়ালের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ওহিদুজ্জামান খলিফা।  

চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন প্রতিবাদ করলে তাকেও গালিগালাজ করে ওহিদুজ্জামান। এসময় চেয়ারম্যান নিজামের লোক ও ওহিদুজ্জামানের লোকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আহত গৌতম কুমার বিশ্বাস চিতলমারী উপজেলার খাসেরহাট এলাকার বিশ্বদেব বিশ্বাসের ছেলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।