ঢাকা: বিদেশে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী এস কে সুর ও শাহ আলমসহ ৮ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে তারা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর চৌধুরী), তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) এভিপি আল মামুন, পিপলস লিজিংয়ের ম্যানেজার (ট্রেজারি) অভীক সিনহা ও ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা অতসী মৃধা। এর মধ্যে এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আগেই হাইকোর্টের দেওয়া আদেশে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
জানা গেছে, দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এদিকে গত ৯ মার্চ পিকে হালদারের সহযোগী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ ৪৫ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশনে চিঠি দেয় দুদক।
অন্যদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় পি কে হালদারের তদন্তের অংশ হিসেবে তার ৭ হাজার ৮০ শতাংশ জমিসহ একটি ১০তলা ভবন জব্দে আদালত থেকে আদেশ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এক আবেদনে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে ড. নাশিদ কামালসহ পাঁচজন বিনিয়োগকারীর করা আবেদনে আদালত ওই আদেশ দেন। ওই ২৫ জন যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারেন বা দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া গত বছরের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট যে ২০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে লীলাবতী হালদার, অভিজিৎ চৌধুরী, অমিতাভ অধিকারী, উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ইরফান উদ্দিন আহমেদের নামও ছিল।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ২৭৫ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে।
এ মামলায় ইতোমধ্যে পি কে হালদারের বেশ কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
এসএমএকে/জেআইএম