রাজশাহী: রাজশাহী শহরের সবচেয়ে জনবহুল মার্কেট হচ্ছে- আরডিএ মার্কেট। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের সবকিছু কেনাকাটার জন্য একমাত্র ভরসাস্থল এই মার্কেট।
কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে এই মার্কেটটিকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস। মার্কেটের প্রবেশ মুখে একটি লাল ব্যানারও টানানো হয়। কিন্তু ঘণ্টা না পেরুতেই ব্যানারটি গায়েব করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে চরম ঝুঁকি নিয়েই এই মার্কেট চালিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
তিন তলা বিশিষ্ট এই মার্কেটে বর্তমানে দুই হাজার ২০০ দোকান রয়েছে। কিন্তু কোনো দুর্বিপাকে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও এই মার্কেটে ঢোকার মতো জায়গা নেই। আর মার্কেটের আশপাশে নেই কোনো পানির উৎসও। মূলত এজন্য ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কেটটিকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস।
এতদিন এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত আরডিএ মার্কেট ভাঙা পড়ছে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেই রাজশাহীর তিন দশক পুরনো এই মার্কেটটি ভেঙে ফেলবে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
শহরের সাহেব বাজার সংলগ্ন এই মার্কেটটির মালিকানা রয়েছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ)। ১৯৮৮ সালে এখানে ১৩৭ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। সংস্কারের পর ২০০৬ সালে আবার দোকান বরাদ্দ শুরু হয়। এরপর ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছেই।
বর্তমানে মার্কেটটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হচ্ছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই কার্যক্রম শুরু করেছে। এটি প্রাথমিক প্রক্রিয়া। ডিপিপি চূড়ান্ত হলেই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করে মার্কেট ভাঙা শুরু হবে।
এর আগে গত ডিসেম্বরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙে নতুন করে নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এরপর আরডিএ প্রক্রিয়া শুরু করলেও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এখনও আলোচনা হয়নি। তবে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের পর সিটি করপোরেশনের সংগে সমন্বয় করে দ্রুতই মার্কেট ভাঙতে চায় আরডিএ।
বর্তমানে আরডিএ মার্কেটের তিন পাশেই সরু গলি রাস্তা। অথচ আরএস রেকর্ড অনুযায়ী রাস্তাগুলোর প্রস্থ মাত্র ৩০ ফুট। ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকরা অবৈধভাবে দখল করে নেওয়ায় রাস্তার প্রস্থ দিন দিন কমে আসছে। এখন রাস্তাগুলোর ওপরেই ব্যবসা করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মার্কেটটির সিঁড়িতেও মালামাল রাখা হয়। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজে নামতেও পারবেন না। তাছাড়া মার্কেটের ভেতরে বৈদ্যুতিক তারে জরাজীর্ণ হয়ে আছে। এতে যে কোনো সময়ই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও জোন-৩ এর অথরাইজড অফিসার আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, মার্কেটে ভাঙার আগে অবশ্যই সেখানকার ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কিছু নেই। মূলত তাদেরকে পুনর্বাসনের কথা মাথায় রেখেই তারা ডিপিপি প্রস্তুত করছে। এটি অনুমোদন হওয়ার পর আরডিএ’র পক্ষ থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সংগে আলোচনা শুরু হবে। এরপরই মার্কেটটি ভাঙা হবে বলে উল্লেখ করেন- আইআরডিএ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২১
এসএস/জেআইএম