ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

তেঁতুলিয়ায় কবরস্থানে আগুন, পুড়লো ৪ মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক কবর

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২১
তেঁতুলিয়ায় কবরস্থানে আগুন, পুড়লো ৪ মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক কবর

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় আক্রোশমূলকভাবে কবরস্থানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরসহ প্রায় শতাধিক কবর পুড়ে গেছে।

 

এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়েরের জন্য থানায় অভিযোগ করেছে মরহুম এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এদিকে এ ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে।

ঘটনাটি ঘটেছে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সিপাইপাড়া ধাইজান গ্রামে। এ ঘটনায় শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে মামলা দায়েরের ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কবরস্থানের ১০ ভাগের মধ্যে প্রায় ৮ ভাগ পুড়ে গেছে। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন তারা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিপাইপাড়া ধাইজান গ্রামে সিপাইপাড়া মৌজার এসএ ১২৯ নম্বর খতিয়ানভুক্ত জমি প্রায় কয়েক যুগ ধরে কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে এই কবরস্থানে ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় শতাধিক মানুষ সমাহিত রয়েছে। দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত কবরস্থানটি বাইনগাছ গ্রামের আ. জব্বারের ছেলে জিয়াউর রহমান (২৮) একই গ্রামের আব্দুল গণি (৬০), আব্দুল জব্বার (৫২), জালাল উদ্দিন (৫০), আব্দুল জলিল (৪৮) নিজেদের দাবি করে গত ২৮ মার্চ (রোববার) বিকেল সাড়ে ৫টায় সবার অগোচরে আক্রোশমূলক ও অন্যায়ভাবে আগুন দিয়ে কবরগুলি জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় কবরস্থানের ৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরসহ প্রায় শতাধিক কবর পুড়ে যায়। পরে বিষয়টি সবার নজরে এলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ওবায়দুল হক আগুন লাগাগোর ঘটনাটি সবাইকে জানিয়ে দেয়।

অভিযোগকারী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইমরান আলী প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, আমি শবে বরাত উপলক্ষে ২৯ মার্চ (সোমবার) বিকেলে কবরস্থানে গেলে দেখি সব কবর আগুনে পুড়ে গেছে। পরে জানার চেষ্টা করলে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ওবায়দুল হক জানান বাজারে যাওয়ার সময় জিয়াউরসহ অভিযুক্তদের কবরে আগুন লাগাতে দেখেছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নয় সাধারণ মানুষ হিসেবে এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ওবায়দুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আগুন লাগানোর সময় জিয়াউরসহ অভিযুক্তদের বাধা দিলেও তারা কবরগুলোতে আগুন দেয়। এমনকি কবরগুলোতে আগুন লাগিয়ে মসজিদে ২০ টাকা দান করবে বলেও আমাকে জানায়।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হকসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি। আর এখন দেখছি মৃত্যুর পরেও আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে আক্রোশমূলকভাবে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়দের কবরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানোয় আমরা অপরাধীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।

তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মাহাবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দুঃখজনক ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের জন্য এটা লজ্জাকর, এবং জাতির জন্য এটা অপমানজনক, আমাদের জন্যও অপমানজনক। বীর মুক্তিযোদ্ধা ৪ জন এখানে শুয়ে আছেন এই কবরস্থানে। এটা বৃটিশ আমলের কবরস্থান। আজকে ব্যক্তিগত স্বার্থে এই কবরস্থানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত করে অতিদ্রুত এর বিচার চাই। নতুবা আমরা অচিরেই তেঁতুলিয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন এবং আন্দোলন শুরু করবো। যদি এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।