ঢাকা: দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রাষ্ট্রের শত্রু বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
রেজাউল করিম বলেন, কেউ যদি নতুন করে স্বপ্নে বিভোর হয় যে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে, তাদের শেখ হাসিনাকে চেনা উচিত।
সোমবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্থানীয় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে কৃষি প্রণোদনা (সার ও বীজ) বিতরণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
রেজাউল করিম বলেন, ভয়াবহ করোনা সংকটে বাংলাদেশ যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালোভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। তার মধ্যে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য মামুনুল হকসহ স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠী অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তার মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের হাতে ইসলাম নিরাপদ নয়। প্রতিটা মসজিদ ও মাদ্রাসায় এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে এ সরকার ইসলামের জন্য যা করেছে দেশের ইতিহাসে কেউ তা করেনি। তারপরও সরকারের শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র পরিচালনার সময়, ইসলামের উন্নয়নের সময় কেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশেকে ধ্বংসের চেষ্টা চালানো হচ্ছে? যারা এটা করছে তারা রাষ্ট্রের শত্রু, ইসলামের শত্রু। তারা উন্নয়নের শত্রু, আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশের শত্রু। তারা যেন কোথাও সহিংসতা সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে। তারা যেখানে অপচেষ্টা চালাবে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, এ দেশে যারা উগ্রতা সৃষ্টি করতে চেয়েছে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের মোকাবিলা করেছি। সেদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে এদেশ উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির নয়, অসাম্প্রদায়িক মানুষদের। একাত্তর সালে যারা পরাজিত তারা কোনোদিন এ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
রেজাউল করিম বলেন, শেখ হাসিনা সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। ধান, চাল, ভুট্টার সঙ্গে মাছ, মাংস, দুধ, ডিমকে সম্মিলিতভাবে কৃষি বোঝায়। কৃষির উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকারের চেয়ে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ এ ৫০ বছরের বাংলাদেশে আর কেউ নিতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কৃষকদের বঙ্গবন্ধু যেভাবে ভর্তুকি দিয়ে বিনামূল্যে পাওয়ার পাম্প, কীটনাশক সরবরাহ করতেন, সে ধারা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু করেছিলেন। ২০০৯ সালে আবার সরকারে এসে সে ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষকের চাষাবাদের জন্য কৃষি উপকরণ, কীটনাশক, সার, বীজ এমনকি কৃষি যন্ত্রপাতি ভর্তুকি দিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন কৃষক বাঁচলে কৃষি বাঁচবে। আর কৃষি বাঁচলে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। এ কারণে আজ আমাদের মাছ, মাংস, দুধ ডিম তথা খাদ্যের অভাব নেই। এ পরিবর্তনের মূলে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা, প্রণোদনা ও নীতি-নির্ধারণ কাজ করেছে।
কৃষি উপকরণ গ্রহণকারী কৃষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। একটা জমিতে তিনটি ফসল ফলানো গেলে সেখানে তিনটা ফসলই ফলাতে হবে। দেশের কোনো উর্বর জমি যেন পতিত না থাকে। এভাবে আমরা কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। করোনাকালে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরে পুষ্টির সরবরাহ প্রয়োজন। সে পুষ্টি শাক-সবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম থেকে আসবে। আপনারা যত বেশি কৃষি উৎপাদন বাড়াবেন তত বেশি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার চ্যালেঞ্জ আরও দৃঢ়তার সঙ্গে আমরা মোকাবিলা করতে পারবো।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ, স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শশাঙ্ক রঞ্জন সমাদ্দার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বশির গাজী, নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ, নেছারাবাদ প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২১
জিসিজি/আরবি