ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাকে বাঁচাতেই পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে ছুটেছিলেন তিনি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২১
মাকে বাঁচাতেই পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে ছুটেছিলেন তিনি

বরিশাল: নিজের শরীরের সঙ্গে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে করে নিজের মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন জিয়াউল হাসান নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা।

শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে রোগী নিয়ে হাসপাতালে’ শিরোনামে একটি সংবাদ বাংলানিউজে প্রকাশিত হয় শনিবার (১৭ এপ্রিল)।

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মায়ের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি কৃষি ব্যাংকের ঝালকাঠি সদর শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা।

কোনো উপায় না পেয়ে মাকে এভাবে অক্সিজেন দিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকার বাড়ি থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়েছে জিয়াউল হাসানকে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার মা রেহেনা পারভীন ঝালকাঠির নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। প্রায় ১০ দিন ধরে মায়ের শরীরে জ্বর দেখা দেয়। তাই গত শনিবার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মায়ের শরীর থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেই। কিন্ত আজ অব্দি সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পাইনি। এদিকে মায়ের শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়ায় গত বৃহষ্পতিবার বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে এসে নমুনা দেই। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আজ রাতে পেয়েছি। আর নমুনা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাই বাড়িতে।

জিয়াউল হাসান আরও বলেন, শনিবার সকাল থেকে অক্সিজেন লেভেল কমে গেলে মায়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেওয়া শুরু করি। এদিকে নলছিটিতে চিকিৎসকদের তেমন কোনো সহায়তা না পেয়ে বরিশালে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা থ্রি হুইলারও ম্যানেজ করতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে আমার মোটরসাইকেলে মাকে নিয়ে রওয়ানা দেই। সেই সময় কোনো ধরনের রিস্ক না নিয়ে মোটরসাইকেলে উঠে পিঠের সঙ্গে সিলিন্ডারটি বেঁধে মায়ের মুখে মাস্কটি লাগিয়ে কৃত্রিম অক্সিজেন সিস্টেমও চালু রাখি।

তিনি বলেন, আমার বড় ভাই মেহেদী হাসান খুলনাতে পুলিশের চাকরি করেন, বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট ভাই রাকিবুল হাসান ছিল। সে আরেকটি মোটরসাইকেলে চেপে আমার পাশে পাশে সারা পথ এসেছে। তখন আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিলো যে, মাকে যেভাবেই হোক হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে, চিকিৎসা করাতে হবে, অন্য কিছু মাথায় আনিনি।

হাসপাতালে আসার পথে পুলিশের চেকপোস্টে বেশ কয়েক জায়গাতে দাঁড়াতে হয়েছে, তাও আবার ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলে হেলমেট না থাকার কারণে। তবে পুলিশ সদস্যদের খুলে বলার পর ছেড়ে দিয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মেট্রো পুলিশের সদস্যরা অক্সিজেন সিলিন্ডারটি দেখতে পেয়েই আমাকে ছেড়ে দেয়।  

জিয়াউল হাসান আরও বলেন, হাসপাতালে আগে থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে সাহায্যের জন্য বলে রেখেছিলাম। তাই আসার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের জন্য একটি বিছানা পেয়ে গেছি। আমার মায়ের চিকিৎসাও তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২১
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।