ঢাকা, সোমবার, ২০ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মিথ্যা তথ্য দিয়ে রেলপথ অধিগ্রহণের টাকা লোপাট!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
মিথ্যা তথ্য দিয়ে রেলপথ অধিগ্রহণের টাকা লোপাট!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে রেলপথের অধিগ্রহণের কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বেলালের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে গত ১৯ এপ্রিল সেখানকার কয়েকজন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

 
 
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত অংশের ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালে কসবা উপজেলার বালিয়াহুড়া মৌজার ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে ৩ নম্বর খতিয়ানের ২ নম্বর দাগের প্রায় দুই একর জায়গার মালিকানা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু জায়গাটি বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়দেবপুর গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন তার বাবা ফজলু মিয়ার মালিকানা দাবি করে এর ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৪২২ টাকা গ্রহন করেন। এছাড়া অধিগ্রহনকৃত ফজলু মিয়ার মালিকানাধীন ৯৩ নম্বর দাগের জায়গায় কোনো গাছপালা ছিলনা বলে অভিযোগ করা হয়।  

কিন্তু ওই জায়গায় আকাশি জাতের ১৫৭০টি ছোট গাছ (১৫৭০ ঘনফুট), মাঝারি ধরনের ২৮০টি (২৮০ ঘনফুট),বড় আকৃতির ৫০টি গাছ (১২৫০ ঘনফুট) এবং ১০০টি কাঁঠাল গাছ (২৫০০ ঘনফুট) দেখিয়ে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।  

বায়েক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী আজমল বলেন, বিল্লাল চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গাটি তার বাবার নামে খারিজ করে। এরপর রেলওয়ে এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। অপর জায়গাটিতে গাছের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও গাছের ক্ষতিপূরণ বাবদ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।  

বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আল মামুন ভূইয়া বলেন, অধিগ্রহণকৃত জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সরকারি সম্পদ অপব্যবহার করে বিল্লাল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। আমি এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

বায়েক ইউনিয়নের কইখলা গ্রামের বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী নূরে আলম ভূইয়া সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, যে জায়গা অধিগ্রহণের টাকা নিয়েছেন বিল্লাল, সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এছাড়া আমার জায়গা থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে নিয়ে রেলওয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি।

তবে অভিযুক্ত বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বলেন, এই সম্পদগুলো আমার দাদার আমলের। আমার বাবার নামে আরওআর রেকর্ড রয়েছে। ৮৫ শতাংশ জায়গা স্থায়ী বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৮-৮৯ সালের বান্দোবস্ত অনুপাতে ওনার নামেই রেকর্ড হয়েছে। এই রেকর্ডভুক্ত জায়গা থেকেই রেলওয়ে অধিগ্রহণ করেছে। তিনটি সংস্থা জায়গা দেখে বিল দিয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, জমি অধিগ্রহণ বা গাছের ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা আমি পাইনি। আমার বাবা পেয়েছে। সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। রেলেওয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রত্যেকে নিজ নিজ বিল তুলেছেন। আমাকে রাজনৈতিভাবে হেয় করার জন্য এই অভিযোগ তোলা হয়েছে।

জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অঞ্জন দাস বাংলানিউজকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। এটি ২০১৬ সালে অধিগ্রহণ করা। তাছাড়া জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেয়ার বিষয়টিও আমার জানা নেই।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে আমাদের ১২৪৫ একর জায়গা আছে। কসবার বালিয়াহুড়া মৌজাতেও জায়গা আছে। অধিগ্রহণকৃত জমির দাগ নম্বরসহ অন্য তথ্যগুলো আমরা চিঠি দিয়ে রেলওয়েকে জানিয়ে দিব। যারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার বিপরীতে অধিগ্রহণের টাকা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।