ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজনন্দিনীর পাড়ে সোনালু-কৃষ্ণচূড়ার অভ্যর্থনা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসফন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
রাজনন্দিনীর পাড়ে সোনালু-কৃষ্ণচূড়ার অভ্যর্থনা

ফেনী: প্রকৃতিতে প্রখর তাপ, হাঁসফাঁস করছে মানুষ। ৩৭-৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রার এই অসহনীয় সময়ে ফের ছোবল বসিয়েছে করোনা।

ইচ্ছে না থাকলেও জীবনের প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। এই প্রখর রোদে কাজের মধ্যে শহরের মানুষ খুঁজে একটু ছায়া।  

ফেনী শহরের পথচারীদের সেই প্রশান্তি টুকু মিলছে রাজাঝির বা রাজনন্দিনী দিঘীর পাড়ে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি পরিবেশে সেখানে অভ্যর্থনা জানায় হলুদাভ সোনালু আর লালরঙা কৃষ্ণচূড়া। গাছের শীতল ছায়ায় বসে নিজেকে কিছু হলেও সতেজ করে নিচ্ছেন পথচারীরা। দিঘীর চারপাশজুড়ে সুদৃশ্য হাঁটার পথ। পথের পাশেই লাগানো নানা প্রজাতির ফুল, পাতা বাহারের মাঝেমধ্যের বসার আসন। সবমিলিয়ে অসাধারণ আবহ তৈরি করেছে ফেনী পৌর কর্তৃপক্ষ। দর্শনার্থীরা জানান, পৌর কর্তৃপক্ষ দারুণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ফেনী শহরের মানুষদের স্বস্তিতে বসার ও হাঁটার অন্যতম স্থান এই রাজাঝির দিঘীর পাড়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে হাঁটা চলার পরিবেশ ছিলো না পৌরসভার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এখন আবার সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

রোকেয়া বেগম নামে একজন জানান, তিনি ফেনীতে এসেছেন ডাক্তার দেখাতে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে আরও কয়েক ঘণ্টা লাগবে, কোথাও বসার ভালো না জায়গা থাকায় দিঘীর পাড়ে বসতে এসছেন।  

তিনি বলেন, রাজাঝির দিঘীর পাড়ে বসার সুন্দর পরিবেশ।  

আবিদ নামে কলেজ পড়ুয়া আরেক দর্শনার্থী বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্র এই দিঘীটা। এখানে বসার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা প্রয়োজন ছিলো। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে হলেও একটা শহরের এমন একটা জায়গা দরকার। গত ৩৫ বছর ধরে পাড়গুলো বারবার অবৈধ দখলে গেলেও চলতি বছরে পুনরায় দখলমুক্ত করায় আসল রূপে ফিরে এসেছে কোনো এক রাজার তৈরি এ দর্শনীয় দিঘী। পাড়ের রাস্তাগুলোতে আবার ভিড় করতে শুরু করেছে শহুরে জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষগুলো।

ত্রিপুরা মহারাজ্যের প্রভাবশালী একজন রাজা তার কন্যার অন্ধত্ব দূর করার বাসনায় প্রায় ৭ শত বছর আগে এ দিঘী খনন করেছিলেন। ফেনীর ঐতিহাসিক রাজাঝির বা রাজনন্দিনীর দিঘী প্রসঙ্গে কবি নবীনচন্দ্র সেন আত্মজীবনীতে এই দিঘীর বর্ণনা লিখেছেন। উনবিংশ শতকের আশির দশকে ফেনী মহকুমার প্রশাসক এ দিঘির রূপ লাবণ্য ফুটিয়ে তুলতে তিন দফায় ৪ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ করেন।

তৎকালীন সময়ে দিঘীর চারপাশ ঘিরে ফেনী শহরের প্রশাসনিক কাঠামো গড়েছিলেন তিনি। দেড়শ বছর আগেই এ দিঘীর চারপাশে চলাচল করতেন স্থানীয়রা। এখানে দিঘীর পাড়ে রয়েছে ফেনী সদর থানা, কোর্ট মসজিদ, অফিসার্স ক্লাব এবং জেলা পরিষদ পরিচালিত শিশু পার্কসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন। কিন্তু একটি চক্র গত ৩৫ বছর ধরে ১০ দশমিক ৩২ একর আয়তন বিশিষ্ট এ ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানকে দখল করে রাখে। এই বছর দখলমুক্ত করে ফেনীর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় জেলা প্রশাসন। প্রতিদিন দর্শনার্থীসহ অনেক মানুষের সমাগম ঘটে এই দিঘীর পাড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত হাঁটলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনই একাধিক রোধ-ব্যাধি থেকেও দূরে থাকা যায় তাই স্থানীয়দের দাবি দিঘীর চারপাশ ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ যেন দ্রুত শেষ করা হয়। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ও ফেনী পৌরসভার তত্ত্বাবধানে ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজাঝির দিঘীর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়েসহ বিনোদন কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ আংশিক সমাপ্ত হয়েছে। বাকি কাজের জন্য ফেনী পৌরসভা নতুন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে জানালেন মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।

মেয়র বলেন, ঐতিহাসিক রাজাঝির দখলমুক্ত রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ দিঘীর পাড়ের নির্মল বাতাস। দিঘীর পাড় পাশকে নান্দনিক রূপ দেওয়া হয়েছে। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পাত্র রাখা আছে, মানুষ যদি নিজেরা সচেতন হয় তাহলে এখান সৌন্দর্য আরও বাড়বে। ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, প্রশাসন থেকে বার বার অভিযান চালিয়ে দিঘীর চারপাশ অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক শোভা মানুষ এখন উপভোগ করতে পারবে।

কিছুদিন আগেও রাজাঝির দিঘীর পাড়ে নিশ্চিন্তে চলাচল অসাধ্য ছিলো। কিন্তু জেলা প্রশাসনের অবৈধ দখল উচ্ছেদে আর পৌরসভার উদ্যোগ দিঘীর চারিপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণ প্রিয় মানুষকে আকৃষ্ট করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।