ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পুরোপুরি নেভেনি সুন্দরবনের আগুন, পুড়েছে ১০ একর বনভূমি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২১
পুরোপুরি নেভেনি সুন্দরবনের আগুন, পুড়েছে ১০ একর বনভূমি

বাগেরহাট: সুন্দরবন পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকার আগুন এখনো সম্পূর্ণ রূপে নেভেনি। সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে আগুন।

থেমে থেমে জ্বলে উঠছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। ধোঁয়াও বের হচ্ছে পৃথক পৃথক জায়গা থেকে। কখন সম্পূর্ণ রূপে এই আগুন নেভাতে পারবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। তবে কঠোর নজদারিতে রয়েছে আগুনের স্থান।

বৃহস্পতিবার (০৬ মে) বিকেল ৫টায় আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিতদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। এর আগে, বুধবার (০৫ মে) সকালে দাসের ভারানি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মাত্র দুই দিন আগে সোমবার (০৩ মে) দুপুরে ওই এলাকার উত্তর পাশে আগুন লেগেছিল। তখন দুই দিনের চেষ্টায় মঙ্গলবার বিকেলে আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও পরের দিন (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টায় আবারও আগুন লাগায় হতবাক হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুইবারের এই অগ্নিকাণ্ডে সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকার অন্তত ১০ একর বনভূমি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নেভাতে বনের মধ্যে যাওয়া আফজাল হাওলাদার, খলিল মাঝি, নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, সোমবার থেকে আজ পর্যন্ত চারদিনই আমরা বনে এসেছি। বনের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের সঙ্গে আগুন নেভাতে কাজ করেছি। দুইবারের আগে বনের অনেক জায়গা পুড়েছে। চোখের দেখায় মনে হয় ১০ একরের বেশি বনভূমি পুড়েছে সর্বগ্রাসী এই আগুনে। এখনো আগুনে পুড়ছে আমাদের বন। কখন নিভবে জানি না। তবে আল্লাহ যদি রহমতের বৃষ্টি দেয় তাহলে সহজে আগুন নিভে যেত।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার (০৫ মে) সকালে সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় আগুনের খবর পেয়ে আমাদের তিনটি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করেছি। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঁচটা পর্যন্ত আমরা আগুন নেভানোর জন্য পানি দিয়েছি। কিন্তু সুন্দরবনে শুকনো পাতার পুরু স্তর ও দুর্গম হওয়ায় আগুন নেভাতে আমাদের খুব বেগ পেতে হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডেরর স্থান থেকে পানির উৎস অনেক দূরে। এখনও নিভে নিভে আগুন জ্বলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মাঝে মাঝে আগুন জ্বলে উঠছে। আজকের মতো আমরা অভিযান সমাপ্ত করেছি। যদি রাতের মধ্যে আগুন না নেভে তাহলে সকালে আবারও আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যে স্থানে আগুন লেগেছে তার পাশেই ছোট গর্ত করে পলিথিন দিয়ে আমরা পানির একটি রিজার্ভার তৈরি করেছি। যদি কোথাও থেকে ছোট খাট আগুন ধরে বা ধোঁয়া দেখা যায় তাহলে বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে পানি দিতে পারবেন। তাহলে ছোট আগুন থেকে বড় আগুন সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে না।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদিন বাংলানিউজকে বলেন, চারদিনের মধ্যে সুন্দরবনের দুইবারের আগুন নেভাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বন বিভাগের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে শতাধিক এলাকাবাসী, সিপিজি সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের তিনটি টিম আগুন নেভানোর কাজ করছে। তবে মূল কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। বিকেলে ৫টা পর্যন্ত বনের মধ্যে আর দৃশ্যমান কোনো আগুন ছিল না। তাই ফায়ার সার্ভিস আজকের মত পানি দেওয়া বন্ধ করেছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় গাছের নিচ ও পাতার স্তুপ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে। বন বিভাগের কর্মীরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। সকাল নাগাদ যদি আবারও আগুন দেখা যায়, তাহলে ফায়ার সার্ভিস আবারও আগুন নেভানোর জন্য পানি দিবে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ বেলায়েতে হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের পরে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে আমরা ক্ষয়ক্ষতি ও পুড়ে যাওয়া বনভূমির পরিমাণ জানাতে পারব। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আগুন লাগার পেছনে যদি কাউকে দায়ী করা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সোমবার (০৩ মে) দুপুর ১২টার দিকে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়দের প্রায় ৩০ ঘণ্টার চেষ্টায় মঙ্গলবার (০৪ মে) বিকেল ৫টায় আগুন নিভে যায়। পরবর্তীকালে বুধবার (০৫ মে) সকালে পূর্বের আগুনে দক্ষিণ পাশে আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই নিয়ে গেল ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৬ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।