ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিলো বসুন্ধরা গ্রুপ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২১
ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিলো বসুন্ধরা গ্রুপ

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের মেদিনীমণ্ডলে দুস্থদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শনিবার (৮ মে) উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছেন সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশলদিয়া গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ লাল মিয়া শেখ।

স্ত্রীকে নিয়েই তার পরিবার। এই দুই সদস্যের সংসারও চলছে কোনোমতে চেয়েচিন্তে।  

শনিবার মাওয়া কালির খিল মাঠে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার ঈদ উপহার সামগ্রী পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়েন লাল মিয়া।  

তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘যারা এসব দিছে, আল্লাহ তাদের আরো অনেক অনেক দেউক। আল্লাহ যেন তাদের বালা-মুসিবত দূর করে হেফাজতে রাখে। ’

কাজির পাগলা গ্রামের আব্দুল রব ও মমতাজ বেগম (৬০) দম্পতির ছেলে-মেয়েসহ চার সদস্যের সংসার। ছেলে ঢাকার একটি অফিসের অফিস সহকারী। তবে লকডাউনের কারণে তার অফিস বন্ধ। ঘরের প্রায় সবাই বেকার। মমতাজ মাঝেমধ্যে অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান, তা দিয়েই চলছে সংসার। অভাবের এই সময়ে বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে বেজায় খুশি মমতাজ বেগম।  

তিনি বলছিলেন, ‘ঘরে তেমন খাবার নেই। তাই ঈদের কথা মাথা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু বসুন্ধরার ঈদ উপহার আমার ঘরে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছে। কী ভালো লাগছে! বসুন্ধরা যেন বছরের পর বছর এভাবে মানুষরে দান করতে পারে, আল্লাহ হেগো হেই তওফিক দেউক। দোয়া করি, তাদের ঘরেও আল্লাহ যেন সারা বছর ঈদের আনন্দ দিয়ে রাখে। ’

লাল মিয়া আর মমতাজ বেগমের মতো লৌহজংয়ের মেদিনীমণ্ডল ও হলদিয়া ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিধবা, ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, গৃহকর্মী, হকারসহ কয়েকশ অসহায় মানুষ শনিবার সকালে বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া ঈদ উপহার সামগ্রী পেয়েছেন। এছাড়া দুপুরে ঢাকার মিরপুর ১৩ নম্বরের নামাচানবাড়ি বস্তি ও মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকার বাগানবাড়ি বস্তির হতদরিদ্র, গৃহকর্মী, রিকশাচালক, দিনমজুরসহ চার শতাধিক অসহায় ছিন্নমূল মানুষ বসুন্ধরার দেওয়া ঈদ উপহার সামগ্রী পেয়েছেন। প্রতিটি প্যাকেটে ছিল চাল, ডাল, তেল, সেমাই, চিনি, ছোলা ও লবণ। এই সহায়তা পেয়ে তারা সবাই যেমন খুশি, তেমনি বসুন্ধরা ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সবাইকে প্রাণভরে দোয়া করেছেন।  রোববার (৯ মে) সিরাজদিখান, টঙ্গিবাড়ী ও সদরে শুভসংঘ মুন্সীগঞ্জের আয়োজনে বসুন্ধরার ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

মাওয়া কালির খিল মাঠে শুভসংঘ আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরার ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।  

মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গরিব-দুস্থ মানুষের হাতে এই উপহারসামগ্রী তুলে দেন।  
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি আশরাফ হোসেন খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।  

বক্তব্যে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ‘আর্তমানবতার সেবায় বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় এগিয়ে। গত বছর করোনা শুরুর সময় সবার আগে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা অনুদান দেয়। শীতের সময় আমার এলাকাসহ সারা দেশে মানুষজন বসুন্ধরার কম্বল পেয়েছে। আজ আবার ঈদ উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছে আমার এলাকার জনগণের জন্য। এজন্য বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ বসুন্ধরা পরিবারকে। বসুন্ধরার মতো যদি সমাজের উচ্চবিত্তরা এগিয়ে আসত, তবে আমাদের দেশে অভাব বলে কিছু থাকত না। আমি করোনার এই দুর্দিনে বসুন্ধরার মতো গরিব-দুঃখীদের পাশে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ’

আশরাফ হোসেন খান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ বারবার আমার ইউনিয়নের জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অভাবী লোকগুলোর মুখে হাসি ফুটিয়ে চলেছে। আজ ঈদ উপহারে যেসব দিয়েছে, এ রকম খাদ্যসামগ্রী অভাবী এই মানুষগুলো অনেক দিন খায়নি। ঈদটা তাদের ভালোই যাবে। ধন্যবাদ বসুন্ধরা গ্রুপকে। ’

এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেন শুভসংঘ মুন্সীগঞ্জ শাখার (সভাপতি) আবু মুহাম্মদ রুইয়াম, (সহসভাপতি) জান্নাতুল ফেরদৌস জুঁই, ফারহান আহাম্মেদ রাতুল, নাজমুল হাসান নিয়ন, মো. আকাশ, কাজী ইমরান হোসেন, মো. আফজল হোসেন, (সাধারণ সম্পাদক) মো. সাইফুল ইসলাম রনি, ওয়াশিউ রহমান বৃন্ত, নাজমুন নাহার মুনা, আলিফ মোহাম্মদ, মাহাবুব রানা, মো. বিল্লাল হোসেন, প্রিতম ঘোষ, মো. সাহেল খান, সাজিয়া ইসলাম, মো. মিথুন হাসান, কিফাত পাটোয়ারী, মো. তরিকুল ইসলাম জিদান, অরিদ হাসান, শাহরিয়ার জামান, মো. ফয়সাল হোসেন, আফরিন আক্তার, রোবাইয়াত জাহান রাবেয়া, ফারদিন হাসান আবির, অনিক হাসান, ফাতেমা তুজ জোহরা রশ্নি, আসমাউল হুসনা মালিহা, মো. সিফাত, তন্ময় মণ্ডল, মো. রাতুল, মো. রাজু, আব্দুল্লাহ আদর ও তানজিলা আক্তার।

মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় শুভসংঘ মিরপুর-১৪ শাখা আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।  

এর আগে বিতরণকারীদের মধ্যে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘের (কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক) রাফিউল আহমেদ চৌধুরী, মশিউর মুস্তাক, শাহ্ মো. হাসিবুর রহমান, তাহসিন মাজেদ রামিম, শেখ সুহাইল আহমেদ জাওয়াদ, রাসেল মিয়া, মাহফুজুর রহমান, শেখ তাইরিন এহসান তানি, সারা মেহজাবিন, নুরজানা বিনতে তানজীম, ইব্রাহিম আহমেদ জিসান, রাবীবুর রহমান, ফারহানা বৈশাখী, শায়লা নুসমা, মাহাজাবিন, লামিয়া শেখ, সাদ্দাম হোসেন, মেহরাব আলদীন, নাবিলা ইসলাম জেরিন ও সাদিয়া আফরিন রিয়া।

উপহারসামগ্রী পেয়ে বাগানবাড়ি বস্তির শেফালি বেগম বলেন, ‘জামাই কাঠমিস্ত্রি। করোনার ল্যাইগা কাজকাম তেমন নাই। পোলা-মাইয়া নিয়া কোনো রকম ডাল-ভাত খাইয়া সংসার চলতেছে। আপনাগো দেওয়া খাবার পাইয়া মনে হইতাছে এবারের ঈদটা ভালোই কাটব। ’ মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকার চা বিক্রেতা মোজাম্মেল হক (৬৫) বলেন, ‘করোনার মধ্যে বেচাকেনা নাই, কামাই-রোজগারও নাই। ঈদে কী বাজার করুম, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। বসুন্ধরার খাওন পাইয়া চিন্তা দূর হইল। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।